ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ২য় পর্ব

নামাজের ফলাফল দুনিয়াতে ও আখেরাতে

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ০৫:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / ২৫৫৬ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নামাজ আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। এই নামাজের ফলাফল মানুষ দুনিয়াতে লাভ করবে। কবুলিয়াত নামাজের জন্য এটা বাস্তব নিদর্শন। যেই নামাজের ফলাফল দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না সেই নামাজে পরকালেও কোন ফল হবে না। আল্লাহ বলেন-উচ্চারণ: ইন্নাছ ছালাতা তানহা আনিল ফাহশায়ে ওয়ালমুনকার।

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সুরায়ে আনকাবুত নং ৪৫)

মানুষ পাপ করবে। আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে তা ক্ষমা করবেন। দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে যেমন শরীরে ময়লা থাকতে পারে না। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তার কোন পাপ থাকতে পারে না। (হাদীস) তাই পাপ মোচনের মাধ্যম নামাজ। আর আল্লাহ যে কোন মাধ্যমেই অধিকাংশ কাজ করেন। রিজিকের মালিক আল্লাহ কিন্তু প্রথম রিজিক মায়ের মাধ্যমে আল্লাহ খাইয়ে থাকেন। ইহাই বাস্তবতা।

হাদীসে ভাষায়: উচ্চারণ: বান্দা আগার কছু না করতা তুবিহী কছুরথা।

অর্থাৎ ‘মানুষ যদি অন্যায় না করত সেটাও অন্যায় ছিল’। বস্তুত জড়জগতের মোহ মানুষকে খারাপ পথে ধাবিত করে। পার্থিব জগতের চাকচিক্য মানব মনকে বিভ্রান্ত করবে এটাই নশ্বর পৃথিবীর খাছিয়াত। কারণ নফসে আম্মারা দুনিয়ামুখী। নফসে-আম্মারা শয়তানের কুমন্ত্রণায় উৎসাহী। নফসে- আম্মারার প্রধান ব্রত ক্ষণিক মোহে লিপ্ত হওয়া। এই নফসে-আম্মারা যখন মানব মনকে বিমোহিত করে, পার্থিব চাকচিক্য, সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ, আনন্দ- উৎসব ও ক্ষণিক স্বার্থ যখন মানুষকে আকর্ষণ করে, দুনিয়ার জীবন তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নফসে-আম্মারার গোলাম হয়ে যায়। নফসে-আম্মারার কৃতদাস হিসেবে এই মানুষ তখন মজবুত হয়ে তার (শয়তানের) নির্দেশিত পথে যেতে বাধ্য হয়। গোলামের মত সে তার গণ্ডিসীমা অতিক্রম করতে পারে না। তখন মানুষ পাপ-পুণ্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এই অবস্থান জন্য মানুষ আল্লাহকে এভাবে দায়ী করে যে, নফসে-আম্মারা যেই আল্লাহর তৈরি, পার্থিব ভোগ-বিলাসও সেই স্রষ্টার তৈরি। শয়তানের কুমন্ত্রণায় সে আত্মভোলা (আল্লাহ ভুলা) হয়ে যায়। এক দিকে আকর্ষণ অন্যদিকে বিকর্ষণ, কোথায় যাবে মানুষ? কে ফিরাবে এই মোহমুগ্ধতা থেকে? মনের আকর্ষণকে বিকর্ষণে রুপান্তর করার জন্য যদি কোন অস্ত্র বা ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মানুষ বাধ্য হয়ে পাপের পথে ধাবিত হবে। এটাইতো স্বাভাবিক।

এ জন্য আল্লাহ দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। পার্থিব মোহমুগ্ধতা ও সুখাভিলাস যতই মানুষকে সত্য গ্রহণে অনিহায় পরিণত করবে, নামাজ ততই তাকে জাহেরী ও বাতেনীভাবে পাপ-পংকিলতার আকর্ষণ থেকে নিরাশ করবে।

পার্থিব জগতের আরাম-আয়েশ, ভোগবিলাস আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তা যেন বান্দাকে বিপথগামী না করে, তজ্জন্য আল্লাহ নির্দেশ করেছেন: “বান্দা তুমি নামাজ কায়েম কর, এই নামাজ তোমাকে নফসে আম্মারার কুমন্ত্রণা থেকে হেফাযত করবে।” পার্থিব জগতের চাকচিক্য, আরাম-আয়েশ তুমি নেয়ামত হিসেবে ভোগ করবে। উহা তোমাকে বিপথগামী করতে পারবেনা। আর এ জন্যই আল্লাহ তবারক তায়ালা পবিত্র কালামে পাকের বিরাশি জায়গায় একইভাবে নামাজ কায়েমের তাকীদ করেছেন। এই নামাজ কায়েমের মাধ্যমে আল্লাহ তবারক তায়ালা বান্দার অন্তর থেকে নফসে আম্মারার পাপের প্রতি আকর্ষণ শক্তিকে বিনষ্ট করে দিবেন। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন- ‘নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’

নামাজ পড়া বা আদায় করার নির্দেশ কোথাও নেই। সহজ ভাষায় ‘পড়া’ অর্থ মুখস্থ করা, ‘আদায় কারা’ অর্থ দায়িত্ব শেষ করা। পক্ষান্তরে ‘কায়েম করা’ অর্থ হৃদয়ংগম করা, প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ নামাজী ব্যক্তি চব্বিশ ঘন্টা নামাজের মধ্যে নিমগ্ন থাকবে। নামাজের মধ্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দিদার ও শান্তি নিহিত। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- অর্থাৎ নামাজ মোমেনীনদের জন্য মে’রাজ।’ মোমেনগণ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে দরশন করতে পারেন।

বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর বলেছেন, ‘নামাজী ইহলোকে থাকিয়ে আল্লাহ তায়ালার সহিত মিলিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করেন। যাহা জান্নাতবাসীরাও সকল সময় লাভ করিবেন না’। বর্ণিত হাদীস খানা যদিও মশহুর নয়। কিন্তু কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক উহা প্রসিদ্ধ।

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ২য় পর্ব

নামাজের ফলাফল দুনিয়াতে ও আখেরাতে

আপডেট সময় : ০৫:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

নামাজ আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। এই নামাজের ফলাফল মানুষ দুনিয়াতে লাভ করবে। কবুলিয়াত নামাজের জন্য এটা বাস্তব নিদর্শন। যেই নামাজের ফলাফল দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না সেই নামাজে পরকালেও কোন ফল হবে না। আল্লাহ বলেন-উচ্চারণ: ইন্নাছ ছালাতা তানহা আনিল ফাহশায়ে ওয়ালমুনকার।

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সুরায়ে আনকাবুত নং ৪৫)

মানুষ পাপ করবে। আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে তা ক্ষমা করবেন। দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে যেমন শরীরে ময়লা থাকতে পারে না। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তার কোন পাপ থাকতে পারে না। (হাদীস) তাই পাপ মোচনের মাধ্যম নামাজ। আর আল্লাহ যে কোন মাধ্যমেই অধিকাংশ কাজ করেন। রিজিকের মালিক আল্লাহ কিন্তু প্রথম রিজিক মায়ের মাধ্যমে আল্লাহ খাইয়ে থাকেন। ইহাই বাস্তবতা।

হাদীসে ভাষায়: উচ্চারণ: বান্দা আগার কছু না করতা তুবিহী কছুরথা।

অর্থাৎ ‘মানুষ যদি অন্যায় না করত সেটাও অন্যায় ছিল’। বস্তুত জড়জগতের মোহ মানুষকে খারাপ পথে ধাবিত করে। পার্থিব জগতের চাকচিক্য মানব মনকে বিভ্রান্ত করবে এটাই নশ্বর পৃথিবীর খাছিয়াত। কারণ নফসে আম্মারা দুনিয়ামুখী। নফসে-আম্মারা শয়তানের কুমন্ত্রণায় উৎসাহী। নফসে- আম্মারার প্রধান ব্রত ক্ষণিক মোহে লিপ্ত হওয়া। এই নফসে-আম্মারা যখন মানব মনকে বিমোহিত করে, পার্থিব চাকচিক্য, সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ, আনন্দ- উৎসব ও ক্ষণিক স্বার্থ যখন মানুষকে আকর্ষণ করে, দুনিয়ার জীবন তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নফসে-আম্মারার গোলাম হয়ে যায়। নফসে-আম্মারার কৃতদাস হিসেবে এই মানুষ তখন মজবুত হয়ে তার (শয়তানের) নির্দেশিত পথে যেতে বাধ্য হয়। গোলামের মত সে তার গণ্ডিসীমা অতিক্রম করতে পারে না। তখন মানুষ পাপ-পুণ্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এই অবস্থান জন্য মানুষ আল্লাহকে এভাবে দায়ী করে যে, নফসে-আম্মারা যেই আল্লাহর তৈরি, পার্থিব ভোগ-বিলাসও সেই স্রষ্টার তৈরি। শয়তানের কুমন্ত্রণায় সে আত্মভোলা (আল্লাহ ভুলা) হয়ে যায়। এক দিকে আকর্ষণ অন্যদিকে বিকর্ষণ, কোথায় যাবে মানুষ? কে ফিরাবে এই মোহমুগ্ধতা থেকে? মনের আকর্ষণকে বিকর্ষণে রুপান্তর করার জন্য যদি কোন অস্ত্র বা ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মানুষ বাধ্য হয়ে পাপের পথে ধাবিত হবে। এটাইতো স্বাভাবিক।

এ জন্য আল্লাহ দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। পার্থিব মোহমুগ্ধতা ও সুখাভিলাস যতই মানুষকে সত্য গ্রহণে অনিহায় পরিণত করবে, নামাজ ততই তাকে জাহেরী ও বাতেনীভাবে পাপ-পংকিলতার আকর্ষণ থেকে নিরাশ করবে।

পার্থিব জগতের আরাম-আয়েশ, ভোগবিলাস আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তা যেন বান্দাকে বিপথগামী না করে, তজ্জন্য আল্লাহ নির্দেশ করেছেন: “বান্দা তুমি নামাজ কায়েম কর, এই নামাজ তোমাকে নফসে আম্মারার কুমন্ত্রণা থেকে হেফাযত করবে।” পার্থিব জগতের চাকচিক্য, আরাম-আয়েশ তুমি নেয়ামত হিসেবে ভোগ করবে। উহা তোমাকে বিপথগামী করতে পারবেনা। আর এ জন্যই আল্লাহ তবারক তায়ালা পবিত্র কালামে পাকের বিরাশি জায়গায় একইভাবে নামাজ কায়েমের তাকীদ করেছেন। এই নামাজ কায়েমের মাধ্যমে আল্লাহ তবারক তায়ালা বান্দার অন্তর থেকে নফসে আম্মারার পাপের প্রতি আকর্ষণ শক্তিকে বিনষ্ট করে দিবেন। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন- ‘নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’

নামাজ পড়া বা আদায় করার নির্দেশ কোথাও নেই। সহজ ভাষায় ‘পড়া’ অর্থ মুখস্থ করা, ‘আদায় কারা’ অর্থ দায়িত্ব শেষ করা। পক্ষান্তরে ‘কায়েম করা’ অর্থ হৃদয়ংগম করা, প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ নামাজী ব্যক্তি চব্বিশ ঘন্টা নামাজের মধ্যে নিমগ্ন থাকবে। নামাজের মধ্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দিদার ও শান্তি নিহিত। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- অর্থাৎ নামাজ মোমেনীনদের জন্য মে’রাজ।’ মোমেনগণ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে দরশন করতে পারেন।

বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর বলেছেন, ‘নামাজী ইহলোকে থাকিয়ে আল্লাহ তায়ালার সহিত মিলিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করেন। যাহা জান্নাতবাসীরাও সকল সময় লাভ করিবেন না’। বর্ণিত হাদীস খানা যদিও মশহুর নয়। কিন্তু কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক উহা প্রসিদ্ধ।

আরো পড়ুনঃ