ঢাকা ১০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পীরের হুকুম অমান্য করার পরিণতি

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ১২:১১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • / ২৪৬৩ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একবার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পেশ ইমাম তথা বাড়ীর মাওলানা আলহাজ্ব সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক আলী (হুজুর পাক তাকে শেষোক্ত নামেই ডাকতেন), দত্তের গাঁয়ের মাওলানা আলহাজ্ব ফজলুর রহমান দেওবন্দী, মাওলানা রুহুল আমিন রংপুরী এবং প্রখ্যাত গজল ও ছামা রচয়িতা মৌলভী শামসুদ্দিন আহমেদ আপন পীর ও মুর্শিদ কেবলাজান হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের সাথে বিশাল এক লঞ্চ কাফেলার সহযাত্রী হিসেবে এনায়েতপুর দরবার শরীফে যান। উলেখ্য, হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব সুদীর্ঘ ৪৮ বছর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বাইরে অন্য কোথাও না গেলেও অন্ততঃ বছরে একবার পবিত্র উরস শরীফে তদীয় পীর উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাক দরবার শরীফ এনায়েতপুরে যেতেন। সে সময় খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃছেঃআঃ) সহযাত্রী হিসেবে তদীয় হাজার হাজার ভক্ত-মুরদিান, আশেকান- জাকেরান এসব কাফেলায় অত্যন্ত হাউস ও মহব্বতের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শরীক হতেন। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল তথা সদরপুর-পিয়াজখালী থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত পদ্মা-যমুনার প্রচন্ড স্রোত ও উত্তাল তরঙ্গমালার সাথে লড়াই করে ছোট বড় অসংখ্য লঞ্চ কিংবা নৌকায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হতো, কখনোবা ঝড় ঝঞ্জায় বিক্ষুব্ধ নদীবক্ষে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দিতে হতো আপন পীরের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা।

 

এবারে আগের কথায় ফিরে আসছি। সত্তর দশকের সেই কাফেলায় শরীক হয়ে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানাধীন গুটিবাড়ী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে পূর্বনির্ধারিত একটি ইসলামী জলছায় বক্তা হিসেবে উপরোক্ত চারজন মাওলানা সাহেবেরই হাজির থাকার কথা ছিল। এজন্য হুজুর কেবলাজান আগেই তাদেরকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন যেন তারা ফেরার পথে পায়ে হেঁটে বেড়া পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে রংপুর চলে যান। কিন্তু বাড়ীর মাওলানা সাদেকুর রহমানের ইচ্ছা কাফেলার লঞ্চেই নগরবাড়ী পর্যন্ত গিয়ে নেমে যাবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। হুজুর পাকের নির্দেশ অমান্য করে কাফেলায় আসা একটি লঞ্চে গিয়ে তারা চারজন উঠলেন। কিন্তু সব লঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেও সেই লঞ্চটি একচুলও সামনে এগুতে পারছেনা, চারপাশে কেবল চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। তীর থেকে মাত্র বিশ/ত্রিশ গজ দূরে হলেও গভীর পানিতে বিশেষ করে শীতকালের কনকনে ঠান্ডা পানিতে নামতে কেউই সাহস পাচ্ছিলেননা। অবশেষে একটি বড় নৌকা ডেকে আনা হলো। কিন্তু ভীত আতংকিত লঞ্চের লোকজন তাড়াহুড়া করে লাফিয়ে নামতে শুরু করলে নৌকার ছৈ ভেঙ্গে পড়ে এবং নৌকাটি ডুবতে থাকে। তখন মাওলানা রুহুল আমিন রংপুরী ও মৌলভী শামসুদ্দিন আহমদ ছাড়া বাকী সবাই সাঁতরে তীরে উঠে গেলেন। এ দু’জন সাঁতার জানতেন না বলে তাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে তোলা হলো। কাজেই মাওলানা সাদেকুর রহমানসহ চার মাওলানাই ভিজে কাপড়ে মাঝপথে একটি স্কুলঘরে অবস্থান করলেন এবং সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বেড়া পর্যন্ত গিয়ে পরে লাইনের বাসে বা অন্য ব্যবস্থায় রংপুর যান।

 

এ ঘটনা থেকে এটাই পরিষ্কার বোঝা গেল যে, কামেল ওলীর হুকুমের বরখেলাপকারীকে জীব ও জড় জগতের তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল পদার্থ বা সকল সৃষ্টিই সহযোগিতা করতে নারাজ। আর কামেল পীরও নানা হিকমত ও কারামতের মাধ্যমে আপন মুরীদানদের এভাবেই সংশোধন করেন বা শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পীরের হুকুম অমান্য করার পরিণতি

আপডেট সময় : ১২:১১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একবার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পেশ ইমাম তথা বাড়ীর মাওলানা আলহাজ্ব সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক আলী (হুজুর পাক তাকে শেষোক্ত নামেই ডাকতেন), দত্তের গাঁয়ের মাওলানা আলহাজ্ব ফজলুর রহমান দেওবন্দী, মাওলানা রুহুল আমিন রংপুরী এবং প্রখ্যাত গজল ও ছামা রচয়িতা মৌলভী শামসুদ্দিন আহমেদ আপন পীর ও মুর্শিদ কেবলাজান হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের সাথে বিশাল এক লঞ্চ কাফেলার সহযাত্রী হিসেবে এনায়েতপুর দরবার শরীফে যান। উলেখ্য, হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব সুদীর্ঘ ৪৮ বছর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বাইরে অন্য কোথাও না গেলেও অন্ততঃ বছরে একবার পবিত্র উরস শরীফে তদীয় পীর উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাক দরবার শরীফ এনায়েতপুরে যেতেন। সে সময় খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃছেঃআঃ) সহযাত্রী হিসেবে তদীয় হাজার হাজার ভক্ত-মুরদিান, আশেকান- জাকেরান এসব কাফেলায় অত্যন্ত হাউস ও মহব্বতের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শরীক হতেন। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল তথা সদরপুর-পিয়াজখালী থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত পদ্মা-যমুনার প্রচন্ড স্রোত ও উত্তাল তরঙ্গমালার সাথে লড়াই করে ছোট বড় অসংখ্য লঞ্চ কিংবা নৌকায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হতো, কখনোবা ঝড় ঝঞ্জায় বিক্ষুব্ধ নদীবক্ষে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দিতে হতো আপন পীরের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা।

 

এবারে আগের কথায় ফিরে আসছি। সত্তর দশকের সেই কাফেলায় শরীক হয়ে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানাধীন গুটিবাড়ী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে পূর্বনির্ধারিত একটি ইসলামী জলছায় বক্তা হিসেবে উপরোক্ত চারজন মাওলানা সাহেবেরই হাজির থাকার কথা ছিল। এজন্য হুজুর কেবলাজান আগেই তাদেরকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন যেন তারা ফেরার পথে পায়ে হেঁটে বেড়া পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে রংপুর চলে যান। কিন্তু বাড়ীর মাওলানা সাদেকুর রহমানের ইচ্ছা কাফেলার লঞ্চেই নগরবাড়ী পর্যন্ত গিয়ে নেমে যাবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। হুজুর পাকের নির্দেশ অমান্য করে কাফেলায় আসা একটি লঞ্চে গিয়ে তারা চারজন উঠলেন। কিন্তু সব লঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেও সেই লঞ্চটি একচুলও সামনে এগুতে পারছেনা, চারপাশে কেবল চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। তীর থেকে মাত্র বিশ/ত্রিশ গজ দূরে হলেও গভীর পানিতে বিশেষ করে শীতকালের কনকনে ঠান্ডা পানিতে নামতে কেউই সাহস পাচ্ছিলেননা। অবশেষে একটি বড় নৌকা ডেকে আনা হলো। কিন্তু ভীত আতংকিত লঞ্চের লোকজন তাড়াহুড়া করে লাফিয়ে নামতে শুরু করলে নৌকার ছৈ ভেঙ্গে পড়ে এবং নৌকাটি ডুবতে থাকে। তখন মাওলানা রুহুল আমিন রংপুরী ও মৌলভী শামসুদ্দিন আহমদ ছাড়া বাকী সবাই সাঁতরে তীরে উঠে গেলেন। এ দু’জন সাঁতার জানতেন না বলে তাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে তোলা হলো। কাজেই মাওলানা সাদেকুর রহমানসহ চার মাওলানাই ভিজে কাপড়ে মাঝপথে একটি স্কুলঘরে অবস্থান করলেন এবং সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বেড়া পর্যন্ত গিয়ে পরে লাইনের বাসে বা অন্য ব্যবস্থায় রংপুর যান।

 

এ ঘটনা থেকে এটাই পরিষ্কার বোঝা গেল যে, কামেল ওলীর হুকুমের বরখেলাপকারীকে জীব ও জড় জগতের তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল পদার্থ বা সকল সৃষ্টিই সহযোগিতা করতে নারাজ। আর কামেল পীরও নানা হিকমত ও কারামতের মাধ্যমে আপন মুরীদানদের এভাবেই সংশোধন করেন বা শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ