ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ৪র্থ পর্ব

কবুলিয়াত নামাজের বাস্তবতা ও দায়েরা

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ০৫:২২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / ২৬৬৯ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খাজাবাবা বলেছেন: ‘হকিকতে এলাহিয়ার মধ্যে চারটি দায়েরা আছে’ যথা: ‘হকিকতে কুরআন, হকিকতে কাবা, হকিকতে সালাত ও মা’বুদিয়াতে ছেরফা। হকিকতে সালাত হল তৃতীয় দায়েরা। সকল দায়েরায় মোরাকাবা মোশাহাদা আছে।’ খাজা বাবা বলেছেন: “এই দায়েরার মুরাকাবায় এই নিয়ত করিতে হইবে যে, দায়েরায় হকিকতে সালাত হইতে ফয়েজ আসিয়া আমার দশ লতিফা বিশিষ্ট হায়াতে ওয়াহদানীতে পড়িতেছে। এই দায়রার নুর আনন্দদায়ক। এই দায়েরার ফয়েজ মনে অতি বিনীতভাবে সৃষ্টি করে। এই দায়েরায় আসিলে ‘হৃদয়’ সব সময় আল্লাহ পাকের জাতের ভিতর ডুবিয়া থাকে। এমন শান্তিময় অনুভূতি সে লাভ করে, যাহার তুলনা এই দুনিয়াতে নাই। ছালেক এই পবিত্র মাকামে আসিলে নামাজের সময়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দদায়ক অনুভূতি লাভ করে। তাহার নিকট ইহা স্পষ্ট হইবে যে, হকিকতে সালাত প্রকৃত পক্ষে হকিকতে কোরআন ও হকিকতে কাবাকে বেষ্টন করে আছে। ছালেকের নিকট মনে হইবে যে, হকিকতে সালাত যেন এক অতি উচ্চ চূড়া বিশিষ্ট নূরের গম্বুজ। সেই গম্বুজের মধ্য হইতে নামাজে দন্ডায়মান ছালেকের উপর তিন হকিকত অর্থাৎ হকিকতে সালাত, হকিকতে কাবা ও হকিকতে কুরআন হুইতে পৃথক পৃথক নূরের স্রোতের ফয়েজান তাহার উপর পড়িতেছে।

হযরত মুসা (আ) তুর পাহাড়ে মূল হইতে পত্র পল্লব পর্যন্ত খোদার নূর প্রজ্বলিত যে বৃক্ষ দেখিয়াছিলেন, ছালেক তখন নিজেকে সেই নূর প্রজ্জলিত বৃক্ষের ন্যায় দেখিবে। তাহার শরীরের প্রতি রেণু পরমাণুতে সে তখন নূরের খেলা দেখিবে। ইহাতে ছালেকের হৃদয় বিগলিত হইবে। তাহার প্রতি অংগ তখন আল্লাহ পাকের হাতের সহিত বিলুপ্ত হইবে। ইহাকেই রাসুলে পাক الصلوة معراج المؤمنين )আচ্ছালাতু মে’রাজুল মু’মিনীন) বলিয়াছেন। এই মাকামে মেরাজের মধ্যে যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খোদা প্রাপ্তি সিদ্ধ হইয়াছিল সেইরূপ মোমেনদিগের নামাজেও খোদাপ্রাপ্তি সিদ্ধ হইবে। এই মাকামে উপনীত ছালেক রুকুতে যাইয়া সেজদায় যাওয়ার কারণ কি এবং কাহাকে কেন কোন স্থানে সেজদা দেওয়া হইতেছে ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করিবে”।

এখানেই শেষ নয়, বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান আল্লাহ দর্শন সম্পর্কে তাঁর নসিহত মোবারকে আরো বলেছেন: নামাজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করা যায়। নামাজের মত এত বড় নেয়ামত ও রহমত আল্লাহ পাক মানুষকে আর দান করেন নাই। কারণ নামাজই প্রেমিক সাধককে আল্লাহ তায়ালার প্রেমের হেরেমের গোপণতম কুঠরীতে লইয়া যায়, সেখানে প্রেমিক সাধককে তিনি (আল্লাহ) নূরের পর্দা উন্মোচন করিয়া আপন জাত পাকের দর্শন দান করেন। এমন সৌভাগ্য অন্য কোন আমলে মানুষকে দেয় না বা অন্য কোন আমলের মধ্যে মানুষ (এই সৌভাগ্য) লাভ করিতে পারে না। তাই সকল আমলের মধ্যে নামাজই শ্রেষ্ঠতম আমল। অতএব বলা হয়, মানুষকে প্রভুর নিকটবর্তী করে যাহা তাহা এই ছালাত’।

বর্ণিত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, নামাজে আল্লাহর দর্শন সত্য। কিভাবে দর্শন হয় তার ও ইঙ্গিত এবং বাস্তবতা বুঝা গেল। সেই নামাজের জন্য পবিত্র কুরআনে ‘কায়েম’ শব্দ বলা হয়েছে। এর একটা বাস্তবতা এবং তাৎপর্য বিশ্লেষণ এই যে, নামাজে আল্লাহর দরশন হবে। আল্লাহর দিদার নছীব হওয়া অর্থাৎ নামাজ কায়েম হওয়া, নামাজ কবুল হওয়া। নামাজের তাছীরের ফলে দিলের ময়লা দূর হওয়া, নামায কবুল হওয়া। নামাজের তাছীরের ফলে দিলের ময়লা দূর হওয়া, দিলের সকল খারাবিয়াত দূর হওয়া অর্থাৎ মানুষ তখন ইচ্ছা করলেও আর পাপের পথে যেতে পারে না। নিজের নামাজেই তাকে পাপের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। তখন প্রমাণিত হয়, নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে বা বিরত করে। তাই নামাজের শেষ পরিণতি আল্লাহর দিদার।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ৪র্থ পর্ব

কবুলিয়াত নামাজের বাস্তবতা ও দায়েরা

আপডেট সময় : ০৫:২২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

খাজাবাবা বলেছেন: ‘হকিকতে এলাহিয়ার মধ্যে চারটি দায়েরা আছে’ যথা: ‘হকিকতে কুরআন, হকিকতে কাবা, হকিকতে সালাত ও মা’বুদিয়াতে ছেরফা। হকিকতে সালাত হল তৃতীয় দায়েরা। সকল দায়েরায় মোরাকাবা মোশাহাদা আছে।’ খাজা বাবা বলেছেন: “এই দায়েরার মুরাকাবায় এই নিয়ত করিতে হইবে যে, দায়েরায় হকিকতে সালাত হইতে ফয়েজ আসিয়া আমার দশ লতিফা বিশিষ্ট হায়াতে ওয়াহদানীতে পড়িতেছে। এই দায়রার নুর আনন্দদায়ক। এই দায়েরার ফয়েজ মনে অতি বিনীতভাবে সৃষ্টি করে। এই দায়েরায় আসিলে ‘হৃদয়’ সব সময় আল্লাহ পাকের জাতের ভিতর ডুবিয়া থাকে। এমন শান্তিময় অনুভূতি সে লাভ করে, যাহার তুলনা এই দুনিয়াতে নাই। ছালেক এই পবিত্র মাকামে আসিলে নামাজের সময়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দদায়ক অনুভূতি লাভ করে। তাহার নিকট ইহা স্পষ্ট হইবে যে, হকিকতে সালাত প্রকৃত পক্ষে হকিকতে কোরআন ও হকিকতে কাবাকে বেষ্টন করে আছে। ছালেকের নিকট মনে হইবে যে, হকিকতে সালাত যেন এক অতি উচ্চ চূড়া বিশিষ্ট নূরের গম্বুজ। সেই গম্বুজের মধ্য হইতে নামাজে দন্ডায়মান ছালেকের উপর তিন হকিকত অর্থাৎ হকিকতে সালাত, হকিকতে কাবা ও হকিকতে কুরআন হুইতে পৃথক পৃথক নূরের স্রোতের ফয়েজান তাহার উপর পড়িতেছে।

হযরত মুসা (আ) তুর পাহাড়ে মূল হইতে পত্র পল্লব পর্যন্ত খোদার নূর প্রজ্বলিত যে বৃক্ষ দেখিয়াছিলেন, ছালেক তখন নিজেকে সেই নূর প্রজ্জলিত বৃক্ষের ন্যায় দেখিবে। তাহার শরীরের প্রতি রেণু পরমাণুতে সে তখন নূরের খেলা দেখিবে। ইহাতে ছালেকের হৃদয় বিগলিত হইবে। তাহার প্রতি অংগ তখন আল্লাহ পাকের হাতের সহিত বিলুপ্ত হইবে। ইহাকেই রাসুলে পাক الصلوة معراج المؤمنين )আচ্ছালাতু মে’রাজুল মু’মিনীন) বলিয়াছেন। এই মাকামে মেরাজের মধ্যে যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খোদা প্রাপ্তি সিদ্ধ হইয়াছিল সেইরূপ মোমেনদিগের নামাজেও খোদাপ্রাপ্তি সিদ্ধ হইবে। এই মাকামে উপনীত ছালেক রুকুতে যাইয়া সেজদায় যাওয়ার কারণ কি এবং কাহাকে কেন কোন স্থানে সেজদা দেওয়া হইতেছে ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করিবে”।

এখানেই শেষ নয়, বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান আল্লাহ দর্শন সম্পর্কে তাঁর নসিহত মোবারকে আরো বলেছেন: নামাজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করা যায়। নামাজের মত এত বড় নেয়ামত ও রহমত আল্লাহ পাক মানুষকে আর দান করেন নাই। কারণ নামাজই প্রেমিক সাধককে আল্লাহ তায়ালার প্রেমের হেরেমের গোপণতম কুঠরীতে লইয়া যায়, সেখানে প্রেমিক সাধককে তিনি (আল্লাহ) নূরের পর্দা উন্মোচন করিয়া আপন জাত পাকের দর্শন দান করেন। এমন সৌভাগ্য অন্য কোন আমলে মানুষকে দেয় না বা অন্য কোন আমলের মধ্যে মানুষ (এই সৌভাগ্য) লাভ করিতে পারে না। তাই সকল আমলের মধ্যে নামাজই শ্রেষ্ঠতম আমল। অতএব বলা হয়, মানুষকে প্রভুর নিকটবর্তী করে যাহা তাহা এই ছালাত’।

বর্ণিত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, নামাজে আল্লাহর দর্শন সত্য। কিভাবে দর্শন হয় তার ও ইঙ্গিত এবং বাস্তবতা বুঝা গেল। সেই নামাজের জন্য পবিত্র কুরআনে ‘কায়েম’ শব্দ বলা হয়েছে। এর একটা বাস্তবতা এবং তাৎপর্য বিশ্লেষণ এই যে, নামাজে আল্লাহর দরশন হবে। আল্লাহর দিদার নছীব হওয়া অর্থাৎ নামাজ কায়েম হওয়া, নামাজ কবুল হওয়া। নামাজের তাছীরের ফলে দিলের ময়লা দূর হওয়া, নামায কবুল হওয়া। নামাজের তাছীরের ফলে দিলের ময়লা দূর হওয়া, দিলের সকল খারাবিয়াত দূর হওয়া অর্থাৎ মানুষ তখন ইচ্ছা করলেও আর পাপের পথে যেতে পারে না। নিজের নামাজেই তাকে পাপের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। তখন প্রমাণিত হয়, নামাজ মানুষকে খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে বা বিরত করে। তাই নামাজের শেষ পরিণতি আল্লাহর দিদার।

 

আরো পড়ুনঃ