ঢাকা ১০:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তরিকতের ওজিফা আদায়ের মাধ্যমে জামানার মুসিবত থেকে বাঁচা সম্ভব

  • আপডেট সময় : ০৫:০১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ২৩৯৯ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তরিকতের ওজিফা আদায়ের মাধ্যমে জামানার মুসিবত থেকে বাঁচা সম্ভবঃ

বর্তমান জামানা কঠিন মুসিবতের জামানা। এই সময় এমন এক সময়, যখন চতুর্দিকে মুসিবতের পর মুসিবত দেখা যাইবে। আমার পীর কেবলাজান হুজুর হযরত এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব বলিয়া গিয়াছেন, “এমন একটা সময় আসিবে যখন জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে বা আকাশে বিপদের পর বিপদ দেখা যাইবে।”

জামানার মুসিবত থেকে বাঁচার জন্য তোমরা তরিকতের পথ তথা পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধর। তোমরা নিয়মিত নামাজ পড়; তরিকতের ওজিফা যেমন সকালে ফজর নামাজের পরে ফাতেহা শরীফ, খতম শরীফ, মাগরিব নামাজের পরে ফাতেহা শরীফ এবং এশার নামাজের পরে তরিকতের নিয়ম অনুযায়ী দরুদ শরীফ পড়িয়া রাসূলে করীম (সঃ) কে নজরানা দিও।

তোমরা যতই জ্ঞানী, গুণী, উচ্চ শিক্ষিত হও না কেন, পরবর্তী মুহূর্ত তোমাদের জন্য কি বহন করিয়া আনিতেছে তাহা তোমরা জান না। মহাকবি হাফেজ বলেন, “তুমি যত বড়ই জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিমান, সাইন্টিস্ট, বৈজ্ঞানিক হও না কেন, তোমার পীরের নিকট তুমি কিছুই নও। যদি দুর্বিপাকের তুফান থেকে বাঁচতে চাও, তবে পীরের সংগকে নূহের তরী মনে করে শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে, যাহা তোমার সবল ভিত্তিকে ভাংগিয়া মেছমার করিয়া ফেলিবে।

তোমরা জান, হযরত নূহ (আঃ)-এর সময় যে মহাপ্লাবন হইয়াছিল, সেই মহাপ্লাবন থেকে শুধুই তাঁহার অনুসারীবর্গ রক্ষা পাইয়াছিলেন। অনুসারীদের লইয়া হযরত নূহ (আঃ) এক নৌকায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। সেই নৌকায় যাহারা আশ্রয় লাভ করিয়াছিলেন, তাহারা ব্যতীত আর কেউই সেই প্লাবন হইতে রক্ষা পায় নাই। আল্লাহতায়ালার বুজর্গানে দীনের কদম যাহারা ধরিয়া থাকেন, আল্লাহ্পাক তাহাদের রক্ষা করেন।

সমস্ত বিপদ-আপদে, জীবনে চলার পথে আল্লাহ্পাকের রহমতের ছায়া পাওয়ার জন্য মোর্শেদে কামেল যে পথ আল্লাহ্পাকের পক্ষ থেকে প্রদর্শন করেন, সেই পথ অনুসরণ করিলেই, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তরিকতের নিয়ম অনুযায়ী ফাতেহা শরীফ আদায়পূর্বক নকশ্বন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) সহ অন্যান্য তরিকতের ইমামবর্গ, ওলী-আল্লাহগণ ও আপন পরলোকগত মুরব্বীদের রুহের উদ্দেশ্যে সওয়াব নজরানা দিলে তরিকতের ইমামগণ, ওলী-আল্লাহ্কল তার বিনিময়ে তোমাদের জন্য দু’আ করিবেন, তাহাদের দু’আর বরকতে তোমাদের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত নিঃসন্দেহে দূর হইবে। নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকতের খতম শরীফ এমন একটা ওজিফা যাহা, নিয়মিত ও নিয়ম অনুযায়ী পাঠ করিলে আল্লাহতায়ালা পাঠকারীকে তাহার কুওতে এলাহিয়ার কেল্লায় বা আল্লাহ্পাকের কুওতের দুর্গে ও রহমতের ছায়ায় ঢাকিয়া রাখেন। খতম শরীফ আদায়ে অন্ততঃ একশত রকম বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আল্লাহপাকই বিপদ দেন। তিনি তাহার আপন কুদরতেই যাহাকে ইচ্ছা রক্ষা করেন। খতম শরীফে ৫০০ মর্তবা “লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ্” এই দু’আ পাঠ করা হয়। তাহার অর্থ আল্লাহ্পাকের শক্তির উপর অন্য কোন শক্তি নাই ও সেই শক্তির আশ্রয় কামনা করা। এই দু’আর আগে ও পরে ১০০ বার করিয়া যে দরুদ শরীফ পাঠ করা হয় তাহার অর্থ রাসূলে করীম (সঃ) এর প্রতি সালাম প্রদান ও তার অছিলা কামনা করা। খতম শরীফে এই ভাবে পীরানে পীর বর্গের আত্মিক অছিলাসহ হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এর অছিলা লইয়া আল্লাহতায়ালার আশ্রয় কামনা করা হয়। তাই খতম শরীফ অব্যর্থভাবে নিয়মিত পাঠকারীকে সকল বিপদ-আপদ ও আল্লাহ্র গজব থেকে রক্ষা করে। তোমরা কেউ যেন খতম শরীফ পড়িতে ভুল না কর।

প্রতি মাগরিবের নামাজের বাদে ফাতেহা শরীফের পরে কুওতে এলাহিয়ার ফয়েজ খেয়াল করিবে। এই ফয়েজ খেয়াল করিলে দিন ও রাত্রি সকল সময় আল্লাহতায়ালার কুওতের কেল্লায় হেফাজতে থাকিবে। তাই প্রতি মাগরিবের পরে কুওতে এলাহিয়ার ফয়েজ খেয়াল করিয়া আল্লাহতায়ালার কুওতের কেল্লায় হেফাজতে আছ এই খেয়ালে থাক। তাহা হইলে দিন-রাত্রি সকল সময় বিপদ-আপদ হইতে আল্লাহপাক তোমাদের রক্ষা করিবেন।

প্রতি এশার নামাজের বাদে তরিকতের পীরানে পীরগণের আত্মিক অছিলা ধরিয়া ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ পাঠ পূর্বক রাসূলে করীম (সঃ) এর পাক কদমে নজরানা দাও। একবার দরুদ শরীফ আদায়পূর্বক নজরানা দিলে দরুদ শরীফ পাঠকারী আল্লাহপাকের তরফ হইতে ১০টা রহমত লাভ করেন। আল কুরআনের ঘোষণা,

‎‫إِنَّ اللَّهَ وَمَلَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ طَ يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِمُوا‬‎

অর্থাৎ-“নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ও তাহার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ বর্ষণ করিতেছে। হে মো’মিনগণ! তোমরাও তাহার প্রতি দরূদ পাঠ কর ও সালাম প্রেরণ কর।” (সূরা আহযাবঃ ৫৬)

জাকেরগণের নীতি তাই এশার নামাজের পর ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ আদায় করিয়া রাসূলে করীম (সঃ) কে নজরানা দিয়া ডান কাতে শুইয়া থাকা।

প্রতিদিন ভোর রাতে রহমতের সময়ে সুখের শয্যা ত্যাগপূর্বক পাক-সাফ হইয়া, তরিকতের পীরানে পীরগনের আত্মিক অছিলাসহ আল্লাহপাককে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহিমু-এই তিন নাম ধরিয়া ডাকিবে। এই সময় আল্লাহপাক তদীয় রহমতের দরজা খুলিয়া দেন। তাই এই সময়কে ‘রহমতের সময়’ বলা হয়। সকল পয়গম্বরগণ নিশীর শেষে মানব জাতি তথা সমগ্র সৃষ্টির মংগলের জন্য আল্লাহ্পাকের রহমত চাইতেন। পয়গম্বরবর্গের প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী সকল ওলী-আল্লাহগণ সৃষ্টির জন্য আল্লাহপাকের রহমত কামনা করেন। এই সময়ে গাছ-পালা, খেচর-ভূচর, পশু-পাখী সকলেই আপন আপন ভাষায় আল্লাহপাকের জেকের করে। তোমরাও এই সময়ে আল্লাহপাকের কাছে রহমত কামনা করার জন্য সুখের শয্যা ত্যাগ করিয়া, তরিকতের নিয়মানুযায়ী ওলী-আল্লাহগণ ও রাসূলে করীম (সঃ) এর অছিলাসহ আল্লাহপাকের রহমতের দরজায় নিবেদিত প্রাণে তাহার রহমত ও দয়া কামনা করিবে। তিনি তোমাদের অবশ্যই রহমত দান করিবেন। তোমাদের

ও পারলৌকিক জীবনের সকল বাঁধা-বিপত্তি দূর হইবে। জীবন শান্তিময় হইবে। দুঃখ দৈন্যের লেশ মাত্রও আর থাকিবে না। ঐ সময় ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু-আল্লাহতায়ালার এই তিন নাম ধরিয়া নিবেদিত প্রাণে ডাকিবে।

তবে কেবল তসবিহ জপিলেই বন্দেগী হইবে না। আল্লাহতায়ালার প্রতি যেমন কর্তব্য সম্পাদন করিতে হইবে, তেমনি বান্দার প্রতি বান্দার কর্তব্য সম্পাদন করিতে হইবে। ইহাই ইসলামি ফেতরাত। হযরত রাসূলে করীম (সঃ) মুসলমানদের স্ব স্ব প্রতিবেশীদের উপর হক আদায় করবার জন্য খুবই জোর দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, “প্রতিবেশীকে অভুক্ত রাখিয়া যে আহার করে, সে আমার উম্মতই নয়।” আমার সকল মুরীদবর্গকে তাদের নিজ নিজ প্রতিবেশীদের হক আদায় করিতে হইবে। সাধ্য অনুযায়ী গরীব প্রতিবেশী, গরীব আত্মীয় স্বজন, গরীব জাকেরানদের সাহায্য করিবে। অন্ততঃ প্রতিবেশী কেউ যাহাতে অভুক্ত না থাকে সেদিকে খেয়াল করিবে। তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তার দুঃখ দুর্দশা মোচনের জন্য সাহায্য করিবে। রাসূলে করীম (সঃ) ফরমান, “হে মুসলমানগণ! প্রতিবেশীদের তোমরা নিজের গোষ্ঠীর লোক মনে কর।” তোমরা যদি প্রতিবেশীদেরকে সাহায্য না কর, তাদের সাথে সুব্যবহার না কর, যদি তাদের আপদে-বিপদে, দুঃখ দুর্দশায় পাশে না দাঁড়াও, তবে তোমাদের ইবাদত বন্দেগী আল্লাহ্পাকের কাছে কবুলিয়তের যোগ্যতা পাইবে না।

আমার পীর কেবলাজান হুজুর হযরত এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব বলিয়াছেন, “তোমাদের কোন পীর ভাই তোমাদের বাড়ীতে গেলে, তোমরা তোমাদের নিজের চাদর পাতিয়া তাহাকে বসিতে দিবে। তোমার পীর ভাই যদি তোমার বাড়ীতে যায়, তবে মনে করিবে আমিই গিয়াছি। তাহাকে বসিবার জন্য গায়ের চাদর বিছাইয়া দিবে। একজন পীর ভাইকে সত্তর জন সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করিবে। তাহার সাথে ভাল ব্যবহার করিবে।” ইসলামে ভাল ব্যবহারও বন্দেগীর অন্তর্গত। যদি কেহ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাহার সাথে তুমি ভাল ব্যবহার করিবে। ভাল ব্যবহার দ্বারা তাহার খারাপ ব্যবহারের উত্তর দিবে। তাহার মন জয় করিবে। ইহাই ইসলামী ফেতরাত। তোমাদের ব্যবহার এমন হওয়া উচিত নয় যাহাতে মানুষ মনে কষ্ট পাইতে পারে। এমন ভাবে ব্যবহার কবিবে, যাহাতে মানুষ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়। সকল মানুষ তোমার উপর সন্তুষ্ট হইলে আল্লাহপাকও তোমার উপর সন্তুষ্ট হইবেন।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তরিকতের ওজিফা আদায়ের মাধ্যমে জামানার মুসিবত থেকে বাঁচা সম্ভব

আপডেট সময় : ০৫:০১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

তরিকতের ওজিফা আদায়ের মাধ্যমে জামানার মুসিবত থেকে বাঁচা সম্ভবঃ

বর্তমান জামানা কঠিন মুসিবতের জামানা। এই সময় এমন এক সময়, যখন চতুর্দিকে মুসিবতের পর মুসিবত দেখা যাইবে। আমার পীর কেবলাজান হুজুর হযরত এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব বলিয়া গিয়াছেন, “এমন একটা সময় আসিবে যখন জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে বা আকাশে বিপদের পর বিপদ দেখা যাইবে।”

জামানার মুসিবত থেকে বাঁচার জন্য তোমরা তরিকতের পথ তথা পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধর। তোমরা নিয়মিত নামাজ পড়; তরিকতের ওজিফা যেমন সকালে ফজর নামাজের পরে ফাতেহা শরীফ, খতম শরীফ, মাগরিব নামাজের পরে ফাতেহা শরীফ এবং এশার নামাজের পরে তরিকতের নিয়ম অনুযায়ী দরুদ শরীফ পড়িয়া রাসূলে করীম (সঃ) কে নজরানা দিও।

তোমরা যতই জ্ঞানী, গুণী, উচ্চ শিক্ষিত হও না কেন, পরবর্তী মুহূর্ত তোমাদের জন্য কি বহন করিয়া আনিতেছে তাহা তোমরা জান না। মহাকবি হাফেজ বলেন, “তুমি যত বড়ই জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিমান, সাইন্টিস্ট, বৈজ্ঞানিক হও না কেন, তোমার পীরের নিকট তুমি কিছুই নও। যদি দুর্বিপাকের তুফান থেকে বাঁচতে চাও, তবে পীরের সংগকে নূহের তরী মনে করে শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে, যাহা তোমার সবল ভিত্তিকে ভাংগিয়া মেছমার করিয়া ফেলিবে।

তোমরা জান, হযরত নূহ (আঃ)-এর সময় যে মহাপ্লাবন হইয়াছিল, সেই মহাপ্লাবন থেকে শুধুই তাঁহার অনুসারীবর্গ রক্ষা পাইয়াছিলেন। অনুসারীদের লইয়া হযরত নূহ (আঃ) এক নৌকায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। সেই নৌকায় যাহারা আশ্রয় লাভ করিয়াছিলেন, তাহারা ব্যতীত আর কেউই সেই প্লাবন হইতে রক্ষা পায় নাই। আল্লাহতায়ালার বুজর্গানে দীনের কদম যাহারা ধরিয়া থাকেন, আল্লাহ্পাক তাহাদের রক্ষা করেন।

সমস্ত বিপদ-আপদে, জীবনে চলার পথে আল্লাহ্পাকের রহমতের ছায়া পাওয়ার জন্য মোর্শেদে কামেল যে পথ আল্লাহ্পাকের পক্ষ থেকে প্রদর্শন করেন, সেই পথ অনুসরণ করিলেই, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তরিকতের নিয়ম অনুযায়ী ফাতেহা শরীফ আদায়পূর্বক নকশ্বন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) সহ অন্যান্য তরিকতের ইমামবর্গ, ওলী-আল্লাহগণ ও আপন পরলোকগত মুরব্বীদের রুহের উদ্দেশ্যে সওয়াব নজরানা দিলে তরিকতের ইমামগণ, ওলী-আল্লাহ্কল তার বিনিময়ে তোমাদের জন্য দু’আ করিবেন, তাহাদের দু’আর বরকতে তোমাদের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত নিঃসন্দেহে দূর হইবে। নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকতের খতম শরীফ এমন একটা ওজিফা যাহা, নিয়মিত ও নিয়ম অনুযায়ী পাঠ করিলে আল্লাহতায়ালা পাঠকারীকে তাহার কুওতে এলাহিয়ার কেল্লায় বা আল্লাহ্পাকের কুওতের দুর্গে ও রহমতের ছায়ায় ঢাকিয়া রাখেন। খতম শরীফ আদায়ে অন্ততঃ একশত রকম বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আল্লাহপাকই বিপদ দেন। তিনি তাহার আপন কুদরতেই যাহাকে ইচ্ছা রক্ষা করেন। খতম শরীফে ৫০০ মর্তবা “লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ্” এই দু’আ পাঠ করা হয়। তাহার অর্থ আল্লাহ্পাকের শক্তির উপর অন্য কোন শক্তি নাই ও সেই শক্তির আশ্রয় কামনা করা। এই দু’আর আগে ও পরে ১০০ বার করিয়া যে দরুদ শরীফ পাঠ করা হয় তাহার অর্থ রাসূলে করীম (সঃ) এর প্রতি সালাম প্রদান ও তার অছিলা কামনা করা। খতম শরীফে এই ভাবে পীরানে পীর বর্গের আত্মিক অছিলাসহ হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এর অছিলা লইয়া আল্লাহতায়ালার আশ্রয় কামনা করা হয়। তাই খতম শরীফ অব্যর্থভাবে নিয়মিত পাঠকারীকে সকল বিপদ-আপদ ও আল্লাহ্র গজব থেকে রক্ষা করে। তোমরা কেউ যেন খতম শরীফ পড়িতে ভুল না কর।

প্রতি মাগরিবের নামাজের বাদে ফাতেহা শরীফের পরে কুওতে এলাহিয়ার ফয়েজ খেয়াল করিবে। এই ফয়েজ খেয়াল করিলে দিন ও রাত্রি সকল সময় আল্লাহতায়ালার কুওতের কেল্লায় হেফাজতে থাকিবে। তাই প্রতি মাগরিবের পরে কুওতে এলাহিয়ার ফয়েজ খেয়াল করিয়া আল্লাহতায়ালার কুওতের কেল্লায় হেফাজতে আছ এই খেয়ালে থাক। তাহা হইলে দিন-রাত্রি সকল সময় বিপদ-আপদ হইতে আল্লাহপাক তোমাদের রক্ষা করিবেন।

প্রতি এশার নামাজের বাদে তরিকতের পীরানে পীরগণের আত্মিক অছিলা ধরিয়া ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ পাঠ পূর্বক রাসূলে করীম (সঃ) এর পাক কদমে নজরানা দাও। একবার দরুদ শরীফ আদায়পূর্বক নজরানা দিলে দরুদ শরীফ পাঠকারী আল্লাহপাকের তরফ হইতে ১০টা রহমত লাভ করেন। আল কুরআনের ঘোষণা,

‎‫إِنَّ اللَّهَ وَمَلَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ طَ يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِمُوا‬‎

অর্থাৎ-“নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ও তাহার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ বর্ষণ করিতেছে। হে মো’মিনগণ! তোমরাও তাহার প্রতি দরূদ পাঠ কর ও সালাম প্রেরণ কর।” (সূরা আহযাবঃ ৫৬)

জাকেরগণের নীতি তাই এশার নামাজের পর ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ আদায় করিয়া রাসূলে করীম (সঃ) কে নজরানা দিয়া ডান কাতে শুইয়া থাকা।

প্রতিদিন ভোর রাতে রহমতের সময়ে সুখের শয্যা ত্যাগপূর্বক পাক-সাফ হইয়া, তরিকতের পীরানে পীরগনের আত্মিক অছিলাসহ আল্লাহপাককে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহিমু-এই তিন নাম ধরিয়া ডাকিবে। এই সময় আল্লাহপাক তদীয় রহমতের দরজা খুলিয়া দেন। তাই এই সময়কে ‘রহমতের সময়’ বলা হয়। সকল পয়গম্বরগণ নিশীর শেষে মানব জাতি তথা সমগ্র সৃষ্টির মংগলের জন্য আল্লাহ্পাকের রহমত চাইতেন। পয়গম্বরবর্গের প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী সকল ওলী-আল্লাহগণ সৃষ্টির জন্য আল্লাহপাকের রহমত কামনা করেন। এই সময়ে গাছ-পালা, খেচর-ভূচর, পশু-পাখী সকলেই আপন আপন ভাষায় আল্লাহপাকের জেকের করে। তোমরাও এই সময়ে আল্লাহপাকের কাছে রহমত কামনা করার জন্য সুখের শয্যা ত্যাগ করিয়া, তরিকতের নিয়মানুযায়ী ওলী-আল্লাহগণ ও রাসূলে করীম (সঃ) এর অছিলাসহ আল্লাহপাকের রহমতের দরজায় নিবেদিত প্রাণে তাহার রহমত ও দয়া কামনা করিবে। তিনি তোমাদের অবশ্যই রহমত দান করিবেন। তোমাদের

ও পারলৌকিক জীবনের সকল বাঁধা-বিপত্তি দূর হইবে। জীবন শান্তিময় হইবে। দুঃখ দৈন্যের লেশ মাত্রও আর থাকিবে না। ঐ সময় ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু-আল্লাহতায়ালার এই তিন নাম ধরিয়া নিবেদিত প্রাণে ডাকিবে।

তবে কেবল তসবিহ জপিলেই বন্দেগী হইবে না। আল্লাহতায়ালার প্রতি যেমন কর্তব্য সম্পাদন করিতে হইবে, তেমনি বান্দার প্রতি বান্দার কর্তব্য সম্পাদন করিতে হইবে। ইহাই ইসলামি ফেতরাত। হযরত রাসূলে করীম (সঃ) মুসলমানদের স্ব স্ব প্রতিবেশীদের উপর হক আদায় করবার জন্য খুবই জোর দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, “প্রতিবেশীকে অভুক্ত রাখিয়া যে আহার করে, সে আমার উম্মতই নয়।” আমার সকল মুরীদবর্গকে তাদের নিজ নিজ প্রতিবেশীদের হক আদায় করিতে হইবে। সাধ্য অনুযায়ী গরীব প্রতিবেশী, গরীব আত্মীয় স্বজন, গরীব জাকেরানদের সাহায্য করিবে। অন্ততঃ প্রতিবেশী কেউ যাহাতে অভুক্ত না থাকে সেদিকে খেয়াল করিবে। তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তার দুঃখ দুর্দশা মোচনের জন্য সাহায্য করিবে। রাসূলে করীম (সঃ) ফরমান, “হে মুসলমানগণ! প্রতিবেশীদের তোমরা নিজের গোষ্ঠীর লোক মনে কর।” তোমরা যদি প্রতিবেশীদেরকে সাহায্য না কর, তাদের সাথে সুব্যবহার না কর, যদি তাদের আপদে-বিপদে, দুঃখ দুর্দশায় পাশে না দাঁড়াও, তবে তোমাদের ইবাদত বন্দেগী আল্লাহ্পাকের কাছে কবুলিয়তের যোগ্যতা পাইবে না।

আমার পীর কেবলাজান হুজুর হযরত এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব বলিয়াছেন, “তোমাদের কোন পীর ভাই তোমাদের বাড়ীতে গেলে, তোমরা তোমাদের নিজের চাদর পাতিয়া তাহাকে বসিতে দিবে। তোমার পীর ভাই যদি তোমার বাড়ীতে যায়, তবে মনে করিবে আমিই গিয়াছি। তাহাকে বসিবার জন্য গায়ের চাদর বিছাইয়া দিবে। একজন পীর ভাইকে সত্তর জন সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করিবে। তাহার সাথে ভাল ব্যবহার করিবে।” ইসলামে ভাল ব্যবহারও বন্দেগীর অন্তর্গত। যদি কেহ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাহার সাথে তুমি ভাল ব্যবহার করিবে। ভাল ব্যবহার দ্বারা তাহার খারাপ ব্যবহারের উত্তর দিবে। তাহার মন জয় করিবে। ইহাই ইসলামী ফেতরাত। তোমাদের ব্যবহার এমন হওয়া উচিত নয় যাহাতে মানুষ মনে কষ্ট পাইতে পারে। এমন ভাবে ব্যবহার কবিবে, যাহাতে মানুষ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়। সকল মানুষ তোমার উপর সন্তুষ্ট হইলে আল্লাহপাকও তোমার উপর সন্তুষ্ট হইবেন।

 

আরো পড়ুনঃ