দরূদ শরীফের মহত্ব ও ফযীলত
- আপডেট সময় : ০৮:৪০:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৪৭৮ বার পড়া হয়েছে
দরূদ শরীফ পাঠ করার গুরুত্ব ও ফযীলত
দরূদ শরীফ পাঠ করার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালাম মজীদ কুরআন শরীফে এরশাদ করেছেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
উচ্চারণ: ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-য়িকাতাহু ইয়ুদ্বালুনা আ’লান্নাবিয়্যি, ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু সাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলীমা।
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতা মন্ডলী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন, অতএব হে মু’মিনগণ! তোমারাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর।” (অর্থাৎ তোমরা দরূদ শরীফ পাঠ কর।)
প্রকৃতপক্ষে প্রাণী জগতের জন্য আল্লাহ তা’আলার যত নেয়ামত ও রহমত অবতীর্ণ হয়েছে, তার ভিতরে নূরে মুহাম্মদী প্রকাশ করাই হচ্ছে সর্তোত্তম মাধ্যম। যেহেতু এই নূরে মুহাম্মদীই হচ্ছে নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের একমাত্র মাধ্যম বা উসীলা। হযরত রাসূলে করীম (সঃ) হচ্ছেন খালেকু ও মাখলুকের মধ্যে যোগসূত্রের সেতুবন্ধন। তাই সমস্ত উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রতি কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার সর্বোত্তম অনুগ্রহ ও অবদান। নূরে মুহাম্মদীর জন্য শুকুর গুজারী করা এবং জীবনের সর্বস্তরে হযরত নবীয়ে পাকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলা। এই অনুসরণ তিন প্রকার কার্য দ্বারা সম্পন্ন হতে পারে। যথা-(১) মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দ্বারা, (২) শারীরিকভাবে শক্তি ব্যয় করে এবং (৩) আর্থিকভাবে অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগী ও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করতে নিজ অর্থ ব্যয় করে। তবে মৌখিকভাবে নবীয়ে পাকের প্রতি আমাদের যতগুলি কর্তব্য কাজ রয়োছে, তন্মধ্যে তাঁর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্তব্য।
দরূদ শরীফের মহত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেছেন-
“হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দশটি রহমত বর্ষণ করবেন এবং তার আমনলামা হতে দশটি গুনাহ মিটায়ে দিবেন, আর তার দশটি মর্যাদা বাড়ায়ে দিবেন । (নাসায়ী শরীফ)
আরো পড়ুনঃ দরূদে নারিয়াহ ও ফযীলত
হাদীস শারীফ: তিরমিযী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَولَى النَّاسِ بِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَى صَلُوةٍ
উচ্চারণ : আন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওলান্নাসি বী ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি আকছারুহুম আলাইয়্যা ছালাতিন ।
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেছেন, রোজ কেয়ামতে ঐ ব্যক্তি আমার অতি নিকটবর্তী হবে, যে ব্যক্তি (দুনিয়ায়) আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করবে ।
হাদীস শারীফ: বায়হাকী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى عَلَى عِنْدَ قَبْرِى سَمِعْتُهُ وَمَنْ صَلَّى عَلَى نَائِبًا أَبْلِغْتُهُ
উচ্চারণ: আন আবু হুরায়রাতা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান ছল্লা আ’লাইয়্যা ইনদা ক্বাবরী, সামি’তুহু ওয়ামান সল্লা আ’লাইয়্যা নায়িবান্ উবলিগ-তুহু ।
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আমার রওজার নিকট স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করবে, আমি তা শ্রবণ করি। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে তা আমার কাছে (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছায়ে দেয়া হবে । ”
অপর এক হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন-
عن عبد الـ اللهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِي الله الله تَعَالَى عَنْهُ : قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى عَلَى يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِائَةَ مَرَّةٍ غُفِرَتْ لَهُ خَطِيئَتَهُ ثَمَانِينَ سَنَةً
উচ্চারণ: আন আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ক্বালা ক্বালা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মান্ ছল্লা আ’লাইয়্যা ইয়াওমাল্ জুমুয়া’তি মিয়াতা মাররাতিন্ গুফিরাত লাহু খাত্বীয়াতাহু ছামানীনা সানাতান ।
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি জুমুয়া’র দিবসে ১০০ বার দরূদ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ।
প্রকাশ থাকে যে, আমরা শেষ যামানার গুনাহগার উম্মাৎ। আমরা সর্বদা গুনাহের কার্যে ব্যস্ত থাকি। তাই আখেরাতে নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল ইবাদতের পাশাপাশি সর্বদা দরূদ শরীফ পাঠ করা
আমাদের জন্য কর্তব্য। আসুন আমরা বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করে দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাতের উসীলা সঞ্চয় করি।
দরূদ শরীফ পাঠ করিবার নিয়ম
“দালায়েলুল খায়রাত” কিতাবে উল্লেখ আছে, (১) দরূদ শরীফ পাঠকারীর শরীর ও পোশাক এবং স্থান পাক-পবিত্র হতে হবে। অজুর সাথে দরূদ পাঠ করতে হবে, তবে বে-অজু অবস্থায়ও দরূদ শরীফ পাঠ করা জায়েয আছে। (২)
জায়নামাযে কেবলামুখী হয়ে বসে খালেছ দিলে মনোযোগ সহকারে শব্দ করে অথবা নিঃশব্দে দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। (৩) মানুষকে দেখাবার জন্য যেন দরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়, সেইদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। (৪) আর দরূদ শরীফ পাঠ করার সময় মনে মনে এ ধারণা করবে যে, হযরত নবী করীম
(সঃ) এর সম্মুখে যেন দরূদ শরীফ পাঠ করতেছি। (৫) দরূদ শরীফ পাঠ করার. সময় কারো সাথে কথা-বার্তা বলবে না এবং অপবিত্র স্থানে বসে দরূদ শরীফ পাঠ করবে না।
দরূদ শরীফ পাঠ না করার ক্ষতি
হাদীস : হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করতে ভুলে যায়, স্মরণ রাখিও সে ব্যক্তি জান্নাতের পথ ভুলিয়া যাইবে ।
হাদীস : অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন-যে ব্যক্তি পিতা-মাতার অবাধ্যকারী ও আমার সুন্নাত ত্যাগকারী এবং আমার নাম শ্রবণ করতঃ দরূদ পাঠ ত্যাগকারী, তারা কেয়ামতের ময়দানে আমার সাথে সাক্ষাৎ লাভ করতে সক্ষম হবে না ।
অন্য এক হাদীসে মহানবী (সঃ) এরশাদ করেছেন-
عَنْ عُمَرَ ابْنِ الْخَطَّابِ رَضِي اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ إِنَّ الدُّعَاء مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ حَتَّى تُصَلَّى عَلَى نَبِيِّكَ
উচ্চারণ : আ’ন ওমারানিল্ খাত্তাবি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আ’নহু কুলা ইন্নাদ্দোয়া’আ মাওকুফুন্ বাইনাস্ সামায়ি ওয়াল আরদ্বি হাত্তা তুসাল্লী আ’লা নাবিয়্যিকা
অর্থঃ হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আ’নহু বলেছেন-মু’মিনের দোয়া’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থলে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে হযরত নবী করীম (সঃ)-এর নামে দরূদ পাঠ করা না হয় ।