ঢাকা ০২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মার্কিন অধ্যাপক ডক্টর কীটস এর কাহিনী – খাজাবাবার কারামত

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ০৯:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • / ২৪৫২ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও দেশবরেন্য জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ১৯৭৮ইং সালের কোন এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অধ্যাপক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর জন কীটসকে নিয়ে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গেলেন। উদ্দেশ্য বিশ্ব জাকের মঞ্জিল তথা আটরশির মশহুর পীর কেবলাজান হুজুর হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের তরিকা প্রচারসহ বিশ্বব্যাপী তদীয় আধ্যাত্মিক প্রভাব ও বিশাল বিস্তৃত কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখে আসা।

 

দরবার শরীফে পৌছার পর এ্যাডভোকেট লাল ভাই ও ডাঃ আমিনের (বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত) উপর দায়িত্ব দেয়া হলো ডক্টর কীটসকে আপ্যায়ন করা এবং দরবার শরীফের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখানোর জন্য। এছাড়া তার সাথে ইংরেজীতে আলাপচারিতা করার জন্য হযরত কেবলাজান হুজুর ছাহেবের বড় ছাহেবজাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু (পরবর্তীতে হুজুর কেবলাজানের ছোট জামাতা) জনাব রাশেদুল হাসানকেও দায়িত্ব দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দরবার শরীফের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখে শুনে এক পর্যায়ে ডক্টর কীটস পীর কেবলাজানের সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। হযরত কেবলাজান হুজুরের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময় দেয়া হলো রাত ১০টায়। সাক্ষাত হবে তৎকালীন ৬নং বিল্ডিং এর নীচতলায়, পূর্বপার্শ্বের হুজরা শরীফে।

 

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রাত ১০টায় হযরত কেবলাজান হজুর ৬নং ভবনে তাশরিফ আনলেন। সাদা লুঙ্গী, সাদা পাঞ্জাবী ও সাদা টুপি পরিহিত কেবলাজান হুজুর একটি সাধারণ চৌকির উপর অর্ধশায়িত অবস্থায় উপবিষ্ট। আর বিদেশী মেহমান ডক্টর কীটসকে বসতে দেয়া হলো একটি সোফায়। এ সময় হুজুর পাক অত্যন্ত মধুর কন্ঠে কীটসকে ইংরেজী ভাষায় অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, “Please, take your seat.” অতঃপর হযরত কেবলাজান হুজুর একে একে ডক্টর কীটস এর নাম-ধাম, পেশা ও তার স্ত্রী-সন্তানসন্ততিসহ সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়াদিরও খোঁজখবর নিলেন। আর এই অন্তরঙ্গ আলাপ ও কথোপকথনের পুরোটাই ছিল ইংরেজি ভাষায়।

 

আটরশির অজপাড়াগাঁয়ে সার্বক্ষণিক ধর্ম-কর্ম ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনার এ বিশাল কর্মশালায় লক্ষ লক্ষ মুরীদ সন্তানদের নিয়ে যিনি আত্মমগ্ন থাকেন, যিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্ধশতাব্দীকাল ধরে বাইরের জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ও নিভৃত জীবনযাপন করছেন, তিনি আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক উচ্চশিক্ষিত একজন বিদেশী অতিথির সাথে এমন পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল ইংরেজী ভাষায় এত স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন এ যেন অবিশ্বাস্য এক অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে হলো সবার কাছে। উপস্থিত সবাই আত্মবিমোহিতের মতো উভয়ের কথা শুনছেন। ঠিক এমনি সময়ে ডক্টর কীটস হঠাৎ দাড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে এ্যাডভোকেট লাল ভাইকে বললেন, “Mr. Zaman, Help me! Help me!” ডক্টর কীটস তখন শুধু থরথর করে কাঁপছিলেন, কি হয়েছে তা বলতেও পারছিলেননা। তার এ অবস্থা দেখে হুজুর পাক অত্যন্ত সহানুভূতি ও স্নেহের কন্ঠে বললেন, “You are so tired. Please go and take rest.” ডক্টর কীটস এর উদ্দেশ্যে একথা বলে হযরত কেবলাজান হুজুর উঠে গেলেন। পেছনে পেছনে ডক্টর কীটসসহ অন্যেরাও অনুসরণ করলেন। ডক্টর কীটস এর প্রতিটি পদক্ষেপ তখনও টালমাটাল, কেমন যেন অসংলগ্ন। এ সময় তিনি বিড়বিড় করে নিজে নিজেই বলতে লাগলেন, “He is a great holy man. The greatest holy man in the world.”

 

কীটস সাহেব একসময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বিশ্রামের জন্য তাকে মাদ্রাসা ভবনের দ্বিতীয় তলার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ডক্টর কীটসকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন প্রকার সংকোচ না রেখেই সবকথা খুলে বললেন। যার সারমর্ম হচ্ছে এই “আমিতো বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর, তাই ইচ্ছে হলো হুজুরকে আমার শাস্ত্রমতে হিপনোটিজম তথা বশীকরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখি। এ উদ্দেশ্যে আমি আমার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ শুরু করি। কিন্তু যখন তাঁর (হুজুর কেবলাজান) চোখের মধ্যে আমার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম, তখন আমার মনে হলো আকাশ থেকে এক আশ্চর্য নূরের জ্যোতি বা প্রলয়ংকারী আলোর স্রোত যেন তাঁর চোখের সাগরে নেমে এসেছে মহাপ্লাবনের ভয়াবহতায়। শুধু তাই নয়, পরক্ষণেই আমি আরও এক বিস্ময়কর ঘটনা দেখে ভয়ে আতংকে শিউরে উঠলাম। দেখলাম সেই জ্যোতির্ময় অলৌকিক চোখের মধ্যেই ক্রুদ্ধ আগ্নেয়গিরির মতো ফেনিয়ে উঠছে এক ভয়াবহ প্রচন্ড সাইক্লোন, যা আমাকে মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। হ্যাঁ, আমি সেখানে দেখলাম, “Hurricane of the Pacific ocean”, আর তখনই আমি থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম, সাহায্য কামনা করলাম তোমাদের।

 

ডক্টর কীটস রাতেই আবার হুজুর পাকের সাথে দেখা করতে চাইলেন। হযরত কেবলাজান হুজুর তাকে পরের দিন সকাল ১০টায় সাক্ষাতের সময় দিলেন। পরের দিন ঠিক সকাল ১০টায় দক্ষিণ হুজরা শরীফের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে ডক্টর কীটসকে বসতে দেয়া হলো (সেদিন আর তিনি সোফায় বসতে চাইলেননা)। এ সময় ডক্টর কীটস হুজুর পাকের কাছে সবিনয়ে আবেদন জানিয়ে বললেন, “I want to change my religion just now and I want to convert myself to a perfect muslim.” হুজুর পাক বললেন, “Not now, it will be done in coarse of time.” এবারে উঠে ডক্টর কীটস অতি বিনয়ের সাথে হযরত কেবলাজান হুজুরের কদম মুবারক জড়িয়ে ধরে বললেন, “I want your blessings holy man.” ডক্টর কীটসকে হতবাক করে দিয়ে এবারে হুজুর পাক বললেন, “If you have belief in Jessus, my blessings will be with you.” এ সময় ডক্টর কীটস ভক্তি শ্রদ্ধায় আবেগাপ্লুত অশ্রুভেজা অবয়বে, নতশিরে, করজোড়ে, অপরিসীম বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে যামানার মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দেদ, আখেরী মুর্শেদ, বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পূতঃ পবিত্র কদম মুবারকে ও হস্ত মুবারকে বার বার চুমু খেলেন।

 

অত্যন্ত সাদামাটা, লুঙ্গী-টুপি ও পাঞ্জাবী পরিহিত এমন সাধারণ একজন মানুষের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা জাতীয় অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর জন কীটস এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বিশাল ব্যাক্তিত্বের এমন নিঃসঙ্কোচ আত্মসমর্পণ, ভক্তি-ভালোবাসা ও বিস্ময়ের আতিশয্যে এমন দুর্নিবার অশ্রু বিসর্জনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য একমাত্র ভুক্তভোগী আত্মার দর্শন ছাড়া অন্য কারও বোঝার সাধ্য নেই।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

মার্কিন অধ্যাপক ডক্টর কীটস এর কাহিনী – খাজাবাবার কারামত

আপডেট সময় : ০৯:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও দেশবরেন্য জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ১৯৭৮ইং সালের কোন এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অধ্যাপক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর জন কীটসকে নিয়ে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গেলেন। উদ্দেশ্য বিশ্ব জাকের মঞ্জিল তথা আটরশির মশহুর পীর কেবলাজান হুজুর হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের তরিকা প্রচারসহ বিশ্বব্যাপী তদীয় আধ্যাত্মিক প্রভাব ও বিশাল বিস্তৃত কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখে আসা।

 

দরবার শরীফে পৌছার পর এ্যাডভোকেট লাল ভাই ও ডাঃ আমিনের (বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত) উপর দায়িত্ব দেয়া হলো ডক্টর কীটসকে আপ্যায়ন করা এবং দরবার শরীফের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখানোর জন্য। এছাড়া তার সাথে ইংরেজীতে আলাপচারিতা করার জন্য হযরত কেবলাজান হুজুর ছাহেবের বড় ছাহেবজাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু (পরবর্তীতে হুজুর কেবলাজানের ছোট জামাতা) জনাব রাশেদুল হাসানকেও দায়িত্ব দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দরবার শরীফের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখে শুনে এক পর্যায়ে ডক্টর কীটস পীর কেবলাজানের সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। হযরত কেবলাজান হুজুরের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময় দেয়া হলো রাত ১০টায়। সাক্ষাত হবে তৎকালীন ৬নং বিল্ডিং এর নীচতলায়, পূর্বপার্শ্বের হুজরা শরীফে।

 

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রাত ১০টায় হযরত কেবলাজান হজুর ৬নং ভবনে তাশরিফ আনলেন। সাদা লুঙ্গী, সাদা পাঞ্জাবী ও সাদা টুপি পরিহিত কেবলাজান হুজুর একটি সাধারণ চৌকির উপর অর্ধশায়িত অবস্থায় উপবিষ্ট। আর বিদেশী মেহমান ডক্টর কীটসকে বসতে দেয়া হলো একটি সোফায়। এ সময় হুজুর পাক অত্যন্ত মধুর কন্ঠে কীটসকে ইংরেজী ভাষায় অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, “Please, take your seat.” অতঃপর হযরত কেবলাজান হুজুর একে একে ডক্টর কীটস এর নাম-ধাম, পেশা ও তার স্ত্রী-সন্তানসন্ততিসহ সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়াদিরও খোঁজখবর নিলেন। আর এই অন্তরঙ্গ আলাপ ও কথোপকথনের পুরোটাই ছিল ইংরেজি ভাষায়।

 

আটরশির অজপাড়াগাঁয়ে সার্বক্ষণিক ধর্ম-কর্ম ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনার এ বিশাল কর্মশালায় লক্ষ লক্ষ মুরীদ সন্তানদের নিয়ে যিনি আত্মমগ্ন থাকেন, যিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্ধশতাব্দীকাল ধরে বাইরের জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ও নিভৃত জীবনযাপন করছেন, তিনি আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক উচ্চশিক্ষিত একজন বিদেশী অতিথির সাথে এমন পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল ইংরেজী ভাষায় এত স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন এ যেন অবিশ্বাস্য এক অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে হলো সবার কাছে। উপস্থিত সবাই আত্মবিমোহিতের মতো উভয়ের কথা শুনছেন। ঠিক এমনি সময়ে ডক্টর কীটস হঠাৎ দাড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে এ্যাডভোকেট লাল ভাইকে বললেন, “Mr. Zaman, Help me! Help me!” ডক্টর কীটস তখন শুধু থরথর করে কাঁপছিলেন, কি হয়েছে তা বলতেও পারছিলেননা। তার এ অবস্থা দেখে হুজুর পাক অত্যন্ত সহানুভূতি ও স্নেহের কন্ঠে বললেন, “You are so tired. Please go and take rest.” ডক্টর কীটস এর উদ্দেশ্যে একথা বলে হযরত কেবলাজান হুজুর উঠে গেলেন। পেছনে পেছনে ডক্টর কীটসসহ অন্যেরাও অনুসরণ করলেন। ডক্টর কীটস এর প্রতিটি পদক্ষেপ তখনও টালমাটাল, কেমন যেন অসংলগ্ন। এ সময় তিনি বিড়বিড় করে নিজে নিজেই বলতে লাগলেন, “He is a great holy man. The greatest holy man in the world.”

 

কীটস সাহেব একসময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বিশ্রামের জন্য তাকে মাদ্রাসা ভবনের দ্বিতীয় তলার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ডক্টর কীটসকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন প্রকার সংকোচ না রেখেই সবকথা খুলে বললেন। যার সারমর্ম হচ্ছে এই “আমিতো বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর, তাই ইচ্ছে হলো হুজুরকে আমার শাস্ত্রমতে হিপনোটিজম তথা বশীকরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখি। এ উদ্দেশ্যে আমি আমার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ শুরু করি। কিন্তু যখন তাঁর (হুজুর কেবলাজান) চোখের মধ্যে আমার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম, তখন আমার মনে হলো আকাশ থেকে এক আশ্চর্য নূরের জ্যোতি বা প্রলয়ংকারী আলোর স্রোত যেন তাঁর চোখের সাগরে নেমে এসেছে মহাপ্লাবনের ভয়াবহতায়। শুধু তাই নয়, পরক্ষণেই আমি আরও এক বিস্ময়কর ঘটনা দেখে ভয়ে আতংকে শিউরে উঠলাম। দেখলাম সেই জ্যোতির্ময় অলৌকিক চোখের মধ্যেই ক্রুদ্ধ আগ্নেয়গিরির মতো ফেনিয়ে উঠছে এক ভয়াবহ প্রচন্ড সাইক্লোন, যা আমাকে মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। হ্যাঁ, আমি সেখানে দেখলাম, “Hurricane of the Pacific ocean”, আর তখনই আমি থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম, সাহায্য কামনা করলাম তোমাদের।

 

ডক্টর কীটস রাতেই আবার হুজুর পাকের সাথে দেখা করতে চাইলেন। হযরত কেবলাজান হুজুর তাকে পরের দিন সকাল ১০টায় সাক্ষাতের সময় দিলেন। পরের দিন ঠিক সকাল ১০টায় দক্ষিণ হুজরা শরীফের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে ডক্টর কীটসকে বসতে দেয়া হলো (সেদিন আর তিনি সোফায় বসতে চাইলেননা)। এ সময় ডক্টর কীটস হুজুর পাকের কাছে সবিনয়ে আবেদন জানিয়ে বললেন, “I want to change my religion just now and I want to convert myself to a perfect muslim.” হুজুর পাক বললেন, “Not now, it will be done in coarse of time.” এবারে উঠে ডক্টর কীটস অতি বিনয়ের সাথে হযরত কেবলাজান হুজুরের কদম মুবারক জড়িয়ে ধরে বললেন, “I want your blessings holy man.” ডক্টর কীটসকে হতবাক করে দিয়ে এবারে হুজুর পাক বললেন, “If you have belief in Jessus, my blessings will be with you.” এ সময় ডক্টর কীটস ভক্তি শ্রদ্ধায় আবেগাপ্লুত অশ্রুভেজা অবয়বে, নতশিরে, করজোড়ে, অপরিসীম বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে যামানার মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দেদ, আখেরী মুর্শেদ, বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পূতঃ পবিত্র কদম মুবারকে ও হস্ত মুবারকে বার বার চুমু খেলেন।

 

অত্যন্ত সাদামাটা, লুঙ্গী-টুপি ও পাঞ্জাবী পরিহিত এমন সাধারণ একজন মানুষের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা জাতীয় অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর জন কীটস এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বিশাল ব্যাক্তিত্বের এমন নিঃসঙ্কোচ আত্মসমর্পণ, ভক্তি-ভালোবাসা ও বিস্ময়ের আতিশয্যে এমন দুর্নিবার অশ্রু বিসর্জনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য একমাত্র ভুক্তভোগী আত্মার দর্শন ছাড়া অন্য কারও বোঝার সাধ্য নেই।

 

আরো পড়ুনঃ