দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্থ ছাত্রের সুস্থ্যতা লাভ
- আপডেট সময় : ০২:৩৮:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
- / ২৪৪০ বার পড়া হয়েছে
রংপুর জেলার সদর থানার নিশপেতগঞ্জ নিবাসী শামসুল ইসলাম রংপুর জেলা স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৭৩-৭৪ইং সনে এই ছেলেটির সিফিলিস জাতীয় রোগ দেখা যায়। ফলে সে অত্যন্ত স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়ে এবং দিন দিনই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। আহার নিদ্রা কোনটিতেই স্বাভাবিকতা ফিরে আসছেনা। দিনরাত উদাসীনভাবে ঝিম মেরে বসে থাকে। স্কুলের পরীক্ষা দেয়াতো দূরে থাক, পড়াশুনাই করতে পারেনা। শিক্ষক-অভিভাবক সবাই একবারে হতাশ হয়ে পড়েন। সে সময় ছেলেটির এক ভাই গণপূর্ত বিভাগে রংপুরেই চাকুরি করতেন। প্রবীণ জাকের নজরুল ইসলাম প্রধান তাকে পরামর্শ দিলেন ছেলেটিকে মহা পবিত্র উরস শরীফে গরুর কাফেলার সাথে নিয়ে গিয়ে আটরশির পীর কেবলাজান খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের কাছে নালিশ জানাতে। সে সময় বাংলাদেশের সকল জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নজরানার গরুর কাফেলা হাঁটা পথেই দরবার শরীফে নিয়ে যাওয়া হতো। এক মঞ্জিল থেকে পরবর্তী মঞ্জিলের দূরত্ব হতো ১৫ থেকে ২০ মাইলের মধ্যে। এভাবে শত শত গরু ও রাখালসহ এক একটি কাফেলায় শরীক হতো হাজার হাজার জাকের ও উৎসাহী ধর্মপ্রাণ মানুষ। সে এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক কাফেলা। আলোচ্য কাফেলাটি পঞ্চগড় থেকে যাত্রা করে রংপুরের কেন্দ্রীয় মঞ্জিলে পৌছলে রোগাক্রান্ত শামসুল ইসলাম এসে কাফেলায় যোগ দিল। অনেক কষ্টে পায়ে হেঁটে উক্ত কাফেলা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পৌছতে সময় লেগেছিল ২৯ দিন।
নজরুল ইসলাম প্রধান ও অন্যান্য রাখালদের (কাফেলার তত্ত্বাবধায়কদের রাখাল বলা হয়) সহযোগিতায় অসুস্থ স্কুল ছাত্র শামসুল ইসলামকে হযরত কেবলাজান হুজুর শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের সামনে হাজির করে নালিশ পেশ করা হলো। হুজুর কেবলাজান সব শুনে বললেন, “বাবা, এটা কঠিন রোগ। এ রোগ ভাল হবে না।” এত কষ্ট করে, এত দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিকার ছাড়াই ছেলেটিকে ফেরৎ পাঠানো হলে প্রবীণ জাকের নজরুল ইসলামের মুখ থাকেনা; তাই তিনি নাছোড়বান্দা হয়ে পীর কেবলাজানের খেদমতে অনেক অনুনয় বিনয় ও নানা অজুহাত দেখিয়ে ছেলেটির জন্য কেবলাজান হুজুরের নেক দোয়া ও দয়া ভিক্ষা চাইলেন।
এতে কাজ হলো। পীর কেবলাজান দয়া করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “বাবা, তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করবে এবং একটি করে মুরগীর ডিম খাবে। একনাগাড়ে ৩০ দিন এ নিয়ম পালন করবে অব্যাহতভাবে। একদিন বাদ গেলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।” হযরত কেবলাজান হুজুরের নির্দেশ মাথায় করে শামসুল ইসলাম রংপুর ফিরে গেল এবং যথানির্দেশিত নিয়ম বা তদবীর পালন করে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে গেলো। শুধু তাই নয়, সে এস.এস.সি. পরীক্ষায় ষ্টার মার্কস নিয়ে পাশ করল রংপুর জেলা স্কুল থেকেই। পরবর্তীতে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি.ও পাশ করল। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তার পক্ষে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করা আর সম্ভব হয়নি। তবে ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে ফার্স্টক্লাস নিয়ে পলিটেকনিক পাশ করে বাংলাদেশ নেভীতে চাকুরী পেয়ে যান।
একটি কথা এখানে বলে রাখা অপরিহার্য যে, বিশ্বওলী হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব দয়াল নবী রাহমাতালিল আ’লামিন (সাঃ) এর পদাংক অনুসরণ করে রোগ-ব্যাধি, জ্বরাগ্রন্থ, নানা সমস্যা ও সংকটে নিপতিত মানব জাতির কল্যাণেই সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন। সর্বস্তরের পাপক্লিষ্ট, বিভ্রান্ত ও হতাশাগ্রস্থ মানুষকে নিবিঢ় স্নেহ ও ভালোবাসার ছায়ায় রেখে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তির পথ খোদাপ্রাপ্তির পথ দেখিয়েছেন। তথাকথিত একশ্রেণীর পীর সাহেবদের মতো ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজের বাণিজ্যিক কলাকৌশলকে তিনি কখনও প্রশ্রয় দেননি। শুধুমাত্র শরিয়তের স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী কখনওবা ক্ষেত্র বিশেষে বিপদমুক্তির ওসিলা স্বরুপ হয়তো কোন তদবীরের কথা বলে দিতেন, যা অত্যন্ত সহজে পালন করার মতো। প্রকৃত পক্ষে যামানার মহা ইমাম, পীরে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল বিশ্বওলী হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাক জবানের বাণী কিংবা এক পলকের নেক দৃষ্টিই রোগাক্রান্ত মানুষের অব্যর্থ নিরাময়কারী দাওয়া হিসেবে কাজ করতো। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনার অতি নগণ্য অংশই বর্তমান গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে।