যে কুরবানি আল্লাহর পছন্দ

- আপডেট সময় : ১০:০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
- / ২৪০৫ বার পড়া হয়েছে
ইসলামি বিধান অনুসারে একটি শব্দ ইসলামি সমাজকে নাড়া দেয় বলে আমার বিশ্বাস। একজন মুসলিম হিসেবে তা বিশ্বাস করবেন।
আমরা ইতি-ঐতিহ্যসম্পন্ন একজাতি। নাম আমাদের মুসলিম। ধর্ম আমাদের ইসলাম। একটি ব্যক্তিগত মান-ইজ্জত যেমন আছে সবার, তেমনি কাজকর্মেও আলাদা একটি স্বকীয়তা আছে মুসলমানদের; আর সেই স্বকীয়তার মূলমন্ত্র যদি বলি, বলব, নিয়তের কথা। বিশুদ্ধ নিয়তের কথা। অভিধানে ‘নিয়ত’ শব্দের দু’টি অর্থ পাওয়া যায়। যার একটি স্থির, আর অন্যটি সংযম। চমৎতকার দুইটি সামর্থ্যবোধক পেয়ে বেশ ভালোই লাগছে। কারণ তাতে লেখার ইতি খুঁজে পাই আর মুসলিমজাতির সমস্ত আমল বা কাজের অস্থিরতা দুরিকরণে ‘সংযম’ একটি শব্দই যথেষ্ট। একটু বাড়িয়ে বললাম নাকি! না, ঠিকই বলেছি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেন, সমস্ত আমলের প্রতিদান নিয়ত অনুযায়ী (দেয়া হবে।) (বুখারী, মুসলিম) মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতফুল মুন’য়িমে উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেক কাজ ব্যক্তিনিয়তের সাথেই যুক্ত।’
এবার আমরা ‘নিয়ত’ দ্বারা কী বুঝানো হয়, কী বা তার উদ্দেশ্য ? নিয়ত বলতে আমাদের কী বুঝা উচিৎ? তা নিয়ে আলোচনা করবো।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
হে নবি বলে দিন, আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন-মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা আলি ইমরান: ১৬২)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা র. বান্দার আমল আল্লাহ্র দরবারে পৌঁছার দু’টি সূত্র বর্ণনা করেছেন।
এক: “দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই খালেছ করা।” তো কুরবানির পশু কি জন্য কিনেছি? এত দামি, মোটাতাজা পশুটি! দেখলে মন জুড়ে যায়। আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য, না অন্যের বাহ বাহ আর মারহাবা পাবার জন্য ?
দুই: “সকল আমল যেন নবী-রাসূলগণের সাথে মিলে যায়।” অর্থ্যাৎ সমকালীন নবী-রাসূলের সুন্নত বা ত্বরিকা অনুযায়ী হয়।
আমার আপনার কুরবানি যেন নিয়তের ক্ষেত্রে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কুরবানির সাথে মিলে যায়। তিনি যেমন আল্লাহ্র জন্যই কুরবানি করতেন, আমাদেরকেও তাই করতে হবে। পশু কিনার ক্ষেত্রে তিনি যেমন শুধু আল্লাহকে খুশি জন্য কিনতেন।
আমি নবির উম্মত হিসেবে নবির সুন্নত মুতাবিক আমার কুরবানি হচ্ছে কিনা চিন্তা করা। কুরবানির পশু কেনাকাটা থেকে শুরু করে সমস্ত আমল বা কাজ যেন সুন্নত মত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। আমি না মানুষকে দেখানোর জন্য কুরবানি করছি, আর না মাশাআল্লাহ বা সুবহানআল্লাহ পেতে কুরবানি করছি।
একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি পেতে কুরবানসহ সব আমল করা।
আমার আমল যেন আল্লাহ্র জন্য খাস থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে হযরত ওমর বিন খাত্তাব রা. তাঁর মোনাজাতে বলতেন,
“হে আল্লাহ্, আপনি আমার সমস্ত আমলকে সৎ আমলে পরিণত করেন, তা কেবল আপনার জন্যই নির্ধারণ করেন আর তাতে যেন সামান্যতম দখল অন্যকে না দিয়ে পুরাই আপনার ভাগে রাখেন।” ( মাকতাবা শামেলা)
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- নিজের কুরবানির ব্যাপারে বলতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- তাঁর ইবাদত–বান্দেগী, যিকির-আযকার আর দোআ- মোনাজাতের সময় এমনসব দোআ করতেন, যেমনটা তিনি তাঁর কুরবানির ক্ষেত্রে করতেন। বলতেন, “হে আল্লাহ্! এটি আপনার পক্ষ থেকে আপনার জন্য।” হাদিস বিশারদগণ এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘আপনার থেকে’ এর অর্থ হল আপনার উপর ভরসা করে, আপনার কাছে সাহায্য চেয়ে পাওয়া বস্তু। আর ‘আপনার জন্য’ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই ইবাদত বা কুরবানি আপনার জন্যই।’ (দেখুন, মাজমু’য়ুল ফাতাওয়া,খ. ১৪, পৃ. ৯, ইবনে তাইমিয়্যা)
এই জন্যে আমাদের কুরবানির যাবতীয় কার্যাবলী যেন কেবল আল্লাহর জন্য হয়, সেদিকে খিয়াল রেখে বেশি থেকে বেশি কুরবানির নিয়তকে বারবার শুদ্ধ, পরিশুদ্ধ ও যাচাই-বাছাই করা।
এই তো আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে আশকার দীঘির পার বেয়ে জামালখান আসতে ডানে চোখ দিতেই দেখি বুদ্ধমন্দিরে আরাধনায় ব্যস্ত একঝাঁক বনি আদাম। আমি তাদের ব্যস্ততা নিয়ে তেমন একটা বিচলিত হই না। ঈমানহীন বনি আদমের কিসের আবার নিয়ত আর সংযম!
তাদের আগাগোড়াই যেন গোল্লাছুট। অসা¤প্রদায়িক বলে সবার সাথে বেশ ভালোই দিনাতিপাত আমার, তবে বন্ধুরূপে গ্রহণ করি না। দাওয়াতের নিয়তে অসা¤প্রদায়িক মিশামিশি সুন্নত হলেও বন্ধুরূপে গ্রহয় করতে বারণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। কারণ আমরা মুসলিম আর তারা কাফির। দিবারাত্রির সবকাজই তাদের আমলে পরিণত হত যদি তারা ঈমান এনে মুমিন হত।
দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক আর বাৎসরিক সব আমলের ক্ষেত্রে আমাদের নিয়তকে সহীহ শুদ্ধ আর পরিশুদ্ধ করতে হবে।
এই তো আসছে কুরবানির ঈদ। বাৎসরীক আমল। আমরা নিয়তকে সহিশুদ্ধ করি, কারণ আল্লাহ তা’আলা উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা আর ছাগল দেখবেন না , দেখবেন আপনার আমার প্রকাশ্য আমল এবং গোপন নিয়ত। আমরা কোন নিয়তে কুরবানি করছি। আল্লাহকে খুশি করতে, না লোক দেখাতে?
হাদিসে পাকে এরশাদ হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেন,
” নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা দেখেন না তোমাদের মালদৌলত, দেখেন না তোমাদের বেশভূষা, দেখেন শুধুই তোমাদের অন্তর আর আমলে পরিশুদ্ধতা।” (সহীহ মুসলিম: ২৫৬৪)
একই সূত্রে গাঁথা কুরবানির ফযিলতসহ আরেকটি হাদিস শরিফ বর্ণিত হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্যে কুরবানি করার চেয়ে অন্যকোনো আমল আল্লাহ তা’আলার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন কুরবানির এই পশুকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ সবকিছু উপস্থিত করা হবে। আর কুরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তা’আলার নিকট (কুরবানি) কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানি কর। (জামে তিরমিযী: ১৪৯৩)
‘আল্লাহর কাছে না পৌঁছে তাদের গোশত, আর না তাদের রক্ত, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। (সূরা হাজ্জ, ৩৭)
তাই বলছিলাম, নামাযে পূর্বপশ্চিম মুখ ফিরানো যেমন মুখ্যবিষয় নয়, মুখ্যবিষয় হল আল্লাহ্র কথা মতে মত প্রকাশ করে সমস্ত আমল করা, তেমনি কুরবানিতে গৃহপালীত পশু ইত্যাদি কুরবানি করা উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হল আমার আপনার ভেতর বাহিরকে আল্লাহ কর্তৃক পরীক্ষা করা। আমরা কার জন্য কুরবানি করছি, কি দিয়ে এবং কিভাবে করছি তা কোনো আসলবিষয় নয়, মূলবিষয় হল কুরবান করতে গিয়ে আমার আপনার আমল আর নিয়তের পরীক্ষা।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে পরিশোধিত নিয়ত বুঝার এবং সেমতে আমলের তাওফিক দান করেন। আমীন।
- দরূদ শরীফের মহত্ব ও ফযীলত
- নবী করিম (সাঃ) কিসের তৈরি
- বায়াত না হওয়ার কুফল
- ইসলামে ক্ষুধা দর্শন
- রংপুরের জাকের ভাই
- আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ১ম পর্ব
- শীতকালে রোজা ও তাহাজ্জুদ
- পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তির দোয়া
- আকিকা দেওয়ার পর নাম পরিবর্তন করা যাবে?
- আখিরাত জীবন কাকে বলে