জাকের পার্টি: ওলি আল্লাহ তৈরির একটি দল?

- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / ২৪১৮ বার পড়া হয়েছে
জাকের পার্টি: ওলি আল্লাহ তৈরির একটি দল?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জাকের পার্টি একটি স্বতন্ত্র নাম। অনেকের মতে, এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও অনন্য বৈশিষ্ট্য বহন করে। অনেকে বলে থাকেন, “জাকের পার্টি হচ্ছে ওলি আল্লাহ তৈরি করার পার্টি”—এ কথার তাৎপর্য কী? এটি কিভাবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত? চলুন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি।
জাকের পার্টির প্রতিষ্ঠা ও আদর্শ
জাকের পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে, এবং এটি মূলত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শাহসূফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (রাঃ) ছাহেব ।বর্তমান জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা খাজা মোস্তফা আমীর মুজাদ্দেদী। এটি ইসলামিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল, যার মূল লক্ষ্য সমাজে ন্যায়, সত্য ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করা।
জাকের পার্টি দাবি করে যে, তাদের কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লবের অংশ। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ইসলামের মূল শিক্ষা হলো মানুষের আত্মশুদ্ধি, নৈতিক উন্নয়ন এবং সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা। এ কারণেই দলটি নিজেদের “ওলি আল্লাহ তৈরির পার্টি” বলে অভিহিত করে।
জাকের পার্টির মূলনীতিমালা হইলঃ
- জাগতিক জ্ঞানচর্চার সাথে সাথে অধ্যাত্মিকতা চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সৎ গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা।
- অন্যদেরকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনে অনুপ্রানিত করা।
- আর্তমানবতার সেবা করা। এই পার্টির নীতিমালা পুরাপুরি পালন করিলে দেলে আল্লাহ ও রাসুলের মহব্বত পায়দা হইবে। মহব্বতের স্রোতে দেল ধুইয়া পরিষ্কার হইবে। ১৪ই রাত্রির পূর্ণিমার চাদের মত দেল ইজ্জল ও রৌশন হইবে। মানব চরিত্র থেকে হিংসা, দোষ, স্বার্থপরতা, পাপাসিক্তি, দূর হইবে।
ফলে একটি সুন্দর ও সুখি সমাজ সহজেই তৈরি হইবে। জাকের পার্টি একটি ঐক্যবদ্ধ দল।
জাকের পার্টি প্রতিষ্ঠার পটভুমি এবং মূলনীতিঃ
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগ। এই যুগে বস্তু জ্ঞানচর্চার উৎকর্ষতা হইয়াছে, জাগতিক জ্ঞানচর্চার মাত্রা বৃদ্বি পাইয়াছে; কিন্তু আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন নেই। জাগতিক জ্ঞানচর্চার আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় না থাকার কারনে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আজ শান্তি নেই। সর্বত্রই হিংসা, হানাহানি, অনাচার, অবিচার।মানবতা নাই, শিষ্টাচার নাই, ভদ্রতা নাই, আদব নাই, লেহাজ নাই, গাছে ফল নাই, পানিতে মাছ নাই, জমিনে ফসল নাই, শুধু নাই আর নাই। শুধু শুন্যতা আর শূন্যতা।
মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত। মানবতার প্রান আজ ওষ্ঠাগত। এই সংকট থেকে মানবতাকে রক্ষা করিতে হইলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োজন জাগতিক জ্ঞানচর্চার পাশা-পাশি আধ্যাত্মিকতার অনুশীলনের।
উভয় জ্ঞানের যুগপুত চর্চার মাধ্যমে যে মন মানুষের জাগতিক উন্নতি হইবে তেমনি হইবে আত্মিক উন্নতির সাধন বা মানবতার গুনাবলির বিকাশ। আমার পীর কেবলাজান, চতুর্দশ হিজরির মুজাদ্দেদ, হযরত এনায়েতপুরী (কুঃছে;আঃ) সাহেবের সাংগঠনিক পদ্বতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বস্তুজ্ঞান চর্চার পাশা-পাশি আধ্যত্মিক জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।
তদীয় জীবনে শেষ উরসে তাই তিনি জাকের পার্টির ঘোষনা দিয়া যান। তাহার উফাতের ৩৭ বছর পরে তাহার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ১৪১০ হিজরিতে ১২ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৪ই অক্টোবর ১৯৮৯ সালে রহমতের সময়ে জাকের পার্টি গঠন করি।
এই পার্টির মূল নীতিমালা হইলঃ ইসলাম, ইমান, এহসান। এই তিনটির মধ্য নিহিত আছে পরিপূর্ণ ইসলাম। আছে- শরিয়াত, তরিকত, হাকিকত, মারেফাত।
ওলি আল্লাহ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ইসলামে “ওলি” শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর বন্ধু, অর্থাৎ সেই সকল মানুষ যারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তাঁদের ইবাদত, তাকওয়া ও পরিশুদ্ধ জীবনের মাধ্যমে। ইসলামের ইতিহাসে বহু ওলি আল্লাহর নাম পাওয়া যায়, যারা সমাজের জন্য আলোর পথিক হয়েছেন।
জাকের পার্টি মনে করে, তাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তাদের সৎ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিত্বে পরিণত করা। তারা মুরিদগণকে তরীকতপন্থী জীবনযাপন, পীর-মুরিদ সম্পর্ক এবং ইসলামিক মূল্যবোধের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উৎসাহিত করে।
জাকের পার্টির কর্মকাণ্ড ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি
জাকের পার্টির মূল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ইসলাম প্রচার ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন: দলটি বিভিন্ন ওয়াজ, জলসা, মাহফিল ও তরিকতভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
২. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: জাকের পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেয়।
৩. সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রম: গরীব-দুঃখীদের সহায়তা করা, মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা, ওলি-আউলিয়াদের স্মরণে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা ইত্যাদি।
দলটি মনে করে, ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজে প্রকৃত ওলি আল্লাহ সৃষ্টি হতে পারে, যারা শুধু ধর্মীয়ভাবে নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও সমাজের জন্য আদর্শ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবেন।
সমালোচনা ও বিতর্ক
অনেকেই মনে করেন, একটি রাজনৈতিক দল হয়ে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে “ওলি আল্লাহ তৈরি করা” একটি অতিরঞ্জিত দাবি। কেননা, ইসলামি পরিভাষায় ওলি আল্লাহ হওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, কোনো দল বা গোষ্ঠী এটি নিশ্চিত করতে পারে না।
এছাড়া, সমালোচকরা বলেন যে জাকের পার্টির রাজনীতি ও তরিকতের মিশ্রণ অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে দলের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, রাজনীতি ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক, এবং ইসলামিক নৈতিকতার ভিত্তিতেই একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
“জাকের পার্টি হচ্ছে ওলি আল্লাহ তৈরি করার পার্টি”—এই উক্তি মূলত দলটির আধ্যাত্মিক ও সামাজিক লক্ষ্যকে বোঝায়। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের চেয়ে অনেক বেশি, কারণ এটি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রচারেও মনোযোগী। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে দলটি তাদের অনুসারীদের নৈতিক ও আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ধর্মীয় ও আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
- সুফিবাদ বা সূফীজমে পরমতসহিষ্ণুতা
- মোমিন বান্দার পরিচয়
- আসহাবে সুফফা
- বায়াত না হওয়ার কুফল
- আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ১ম পর্ব
- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সৃষ্টির ফাউন্ডেশন – শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (রাঃ) ছাহেব
- শাহ নেয়ামাতুল্লাহ ওয়ালী (রহঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী
- সুফিবাদ কী ? সুফীবাদের মূলনীতি ও স্তর সমূহ
- রাজনীতিতে জাকের পার্টি
- জাকের পার্টি জাতীয় নির্বাচন
- জাকের পার্টি সম্পর্কে বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরীর অবিস্মরণীয় নসিহত