ঢাকা ১০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনীতিতে জাকের পার্টি

  • আপডেট সময় : ১০:০০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪০৫ বার পড়া হয়েছে

রাজনীতিতে জাকের পার্টি

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন ও সংস্কারের রুপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টির এ অভিযাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। প্রথমত উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, কিছু করতে উদ্যোগীরা সবাই রাতারাতি সাফল্য চায়। সফলদের পিছনে কাতারবন্দী হতে আবার সম্ভব অসম্ভব সব ধরনের কৌশলও চলে।

দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক মঞ্চের অনেকেই ভালো নজরে দেখে নি জাকের পার্টির আত্মপ্রকাশ। অনেক ষড়যন্ত্র ও বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করেই জাকের পার্টিকে এগুতে হয়েছে।

তৃতীয়ত জাকের পার্টি কখনোই সন্ত্রাসী, বে আইনী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় নি। জায়গা দেয় নি কোন পেশী শক্তিকেও। তরুন ও যুব সমাজ এবং ছাত্রদের হাতে মাদক, অস্ত্র ও টাকাও তুলে দেয় নি। ফলে প্রচলিত এ সব মাধ্যম পরিহার করে শতভাগ আদর্শ নির্ভর দলটিকে তাই বিগত ২২ বছরে বিশেষ করে যাত্রা শুরুর দিনগুলোতে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাকের পাটি কে তার আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থা আর অবিচল থাকতে দেখে নিরুৎসাহিত করারও চেষ্টা করেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। তাদের পর্যবেক্ষণ ছিল, এ দেশে আদর্শের রাজনীতি চলে না। কিন্তু জাকের পার্টি এ সব অভিঞ্জ মহলের কোন মন্তব্য বা রাজনৈতিক বিশ্লেষনকে মাপকাঠি ধরে বসে থাকে নি। কারন, জাকের পার্টি এ ধারারই তো পরিবর্তন চায়। তা যত কষ্ট হয় হোক।

রাজনীতিতে জাকের পার্টি


শুরুর ২য় বছরে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জাকের পার্টি জাতীয় রাজনীতিতে আরো দৃঢ়তা নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করে। এ সময় থেকে দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। একই সাথে রাজনৈতিক সংকটেও কোন স্বার্থ বিবেচনা না করে শক্তিমত্তা অনুযায়ী কাজ করে যায় জাকের পার্টি। এ সময়ে কয়েকটি বছর নিবিড় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালে প্রথম অঙ্গসংগঠন (সহযোগী সংগঠন) গঠন করা হয়। ছাত্রফ্রন্ট নামে প্রথম অঙ্গসংগঠনের যাত্রা শুরু। তারপর একে একে যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন সুনিশ্চিতে বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন গঠন করা হয়। আবার অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বের করে আনারও লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়।

১৯৯৬ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় কয়েকটি সমাবেশ করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সমাবেশগুলোতে ভাষণ দেন। এর আগে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সুেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে রুপরেখা তুলে ধরে জাকের পার্টি। ১৯৯৭ সালের মাঝামাঝি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের এলাকায় বিশাল এক জনসমাবেশে সে সময়ে রাষ্ট্রে বিরাজমান নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। এসব অসঙ্গতি নিরসনে তিনি তাঁর দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ভবিষ্যৎ রুপরেখা তুলে ধরেন। যা দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কমিটমেন্টকে আরো শাণিত করে। প্রশংসিত হয় নানা মহলে।

এ বছর জাকের পার্টি দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামো আরো সুবিন্যস্ত ও সুবিস্তৃত করন এবং জনগনকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্বের অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করতে দেশব্যাপী ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মসূচী চালায়। এর অংশ হিসাবে জাকের পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহের (সহযোগী সংগঠন) কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে গঠিত ১৫ টি সাংগঠনিক টিম জেলা ও থানা পর্যায়ে ব্যাপক সফর করে। সফরকালে প্রতিটি এলাকায় জনসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্র থেকে প্রেরিত এসব সাংগঠনিক টিম এ সময় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে মতবিনিময়ও করেন।

এ সময়ে সৃষ্ট নানা রাজনৈতিক অসংগতিতে জাকের পার্টি সঙ্গত কারণেই আন্দোলনে নামে। রাজপথের কর্মসূচীতে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। তুমুল আন্দোলনের গতিধারায় রাজধানীতে বিশাল এক প্রতিবাদ মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা হয়, সন্ত্রাসীরা মিছিলে অনুপ্রবেশ করে গাড়ি ভাংচুর করে তা জাকের পার্টির নামে চালিয়ে দিতে চায়। অন্য দিকে, পুলিশ জাকের পার্টির নেতা কর্র্মীদের উপড় বেধড়ক লাঠি চার্জ করে । রেহাই পায় নি মহিলা কমীরাও। উপরন্তুু পুলিশ মিছিল থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েক জন নেতা কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। কারাবরন শেষে তারা মুক্ত হয়ে আসেন।
পরবর্তী দিনগুলোতে জাকের পার্টি জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, দলীয়করনসহ নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখে। রাজধানীর পল্টন ময়দান, ওসমানী উদ্যান, মুক্তাঙ্গনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সভা, সমাবেশ , প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখে। এ সময় কাউকেই ছেড়ে কথা বলে নি জাকের পার্টি।

এরই গতিধারায় এগিয়ে আসে সদরপুর- চরভদ্রাসন আসনে উপ-নির্বাচন। জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে আপামর জনসাধারনের চাপে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হয়। নিরঙ্কুশ বিজয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই প্রতিদ্বন্দীদের রক্তক্ষয়ী জিঘাংসার হাত থেকে জনগনের জানমাল রক্ষায় নির্বাচন বয়কট করে ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে অনন্য নজীর স্থাপন করেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান।

উপ-নির্বাচনে পর্দার আড়ালের নানা ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নির্বাচন বয়কটের অপরিহার্যতা জাতির কাছে তুলে ধরার কমিটমেন্ট থেকে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল এক সমাবেশ করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সমাবেশে সার্বিক দিক জাতির কাছে তুলে ধরেন।

এ সময়ে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান জাতীয় ইস্যুতে তার দৃঢ় অবস্থান অটুট রাখেন বরাবরের ন্যায়। রাজনীতির কঠিন গলিপথ আর চোরাবালির ফাঁদের বিপরীতে আন্দোলনরত নেতা, কর্মী, সমর্থকদের জন্য অনাবিল আনন্দ আর এক পশলা স্নিগ্ধ প্রশান্তির ফুরফুরে হাওয়া বয়ে আনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের ৪০ তম জন্মবার্ষির্কী। ব্যতিক্রমী আনন্দ, উচ্ছাস আর বাঁধভাঙ্গা খুশীর জোয়ারে ভাসে দেশে বিদেশে জাকের পার্টির সকল নেতা, কর্মীসহ সকলে। বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী মাঠসহ নানা জায়গায় ৩ দিনব্যাপী জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্ত দান, দুস্থদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরন ও শীতবস্ত্র বিতরন অন্যতম। ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকেই বাহারী ফুলের বর্ণিল তোড়া, ঝুড়ি হাতে নেতা, কর্মীদের ঢল নামে বনানীতে। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সন্ধ্যা থেকে শুরু করে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত সকলের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহন করেন।

এ আনন্দ উল্লাসের পরেই আসে মহাশোকের সে অধ্যায়। ২০০১ সালের ৩০ শে এপ্রিল দিবাগত রাত মোতাবেক ১ লা মে জাকের পার্টির মহান প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের কোটি কোটি শান্তিকামী মানুষের মহান মুর্শিদ বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব দারুল বাকায় তশরীফ নেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আকষ্মিক এ ঘটনায় জাকের পার্টির সর্বোচ্চ নেতা এবং জাকের পার্টি চেযারম্যানসহ দেশে বিদেশে জাকের পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ কোটি কোটি কল্যাণকামী মানূষ গভীর শোক সমুদ্রে নিমজ্জিত হন। চরম এ আঘাত সাংঘাতিক আঘাত হানে সকলের হৃদয় হেরায়। চূর্ণ বিচূর্ণ হয় ভাবনার সকল জগত। তারপর মহান দু’নেতার অসাধারন ঘুরে দাড়ানো আবার সকলকে ফিরিয়ে আনতে থাকে কাজের জগতে। মহান দু’নেতা অসামান্য দক্ষতায় শোককে শক্তিতে পরিনত করেন।

এ বছরেই আসে জাতীয় নির্বাচন। মহাশোকের চাদরে থাকা জাকের পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নাম মাত্র।
৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে বদল হতে থাকে রাজনীতি, সমাজনীতি ও ধর্মনীতির দৃশ্যপট। খাপছাড়া ভাব ক্রমশই প্রকট হতে থাকে। অবশেষে সকল ধর্মমত পথের মানুষের শান্তিপূর্ণ ভূমি বাংলাদেশে শুরু হয় ভয়াবহ কান্ডকারখানা। ২০০৪ সালে ২৯ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। ২০০৫ সালে ১৭ আগষ্ট সারা দেশে জেলা সদরগুলোতে একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। এ বোমা হামলার মধ্য দিয়েই নিজেদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি জানান দেয় দেশ ও জাতিস্বার্থ এবং সত্য ইসলাম বিরোধী জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

পিছনের ইন্ধনদাতা, আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের চেহারাও জনসমক্ষে পরিস্কার হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রী এ গোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামী জিহাদের নামে একদল মানুষকে বিপথগামী করার পাশাপাশি আবার এ দেশে মানবতা, সভ্যতা তথা ইসলামের সুরভি দানকারী ওলী আল্লাহদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রে নামে। তারা মাজারে মাজারে বোমা হামলা শুরু করে। একই সাথে মাজারে বহুদিনের সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনও ধংসসাধন শুরু করে। সে সময় জেলা জজ আদালতে নারকীয় সিরিজ বোমা হামলায় কয়েকজন জজ, পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ নিরীহ জনসাধারনও নিহত হয়।
এমনকি সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) ছাহেবের মাজার যিয়ারত করতে গেলে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এ গোষ্ঠীর বোমা হামলার শিকার হন। অন্যদিকে, শুধু বোমা হামলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি তারা। মানব কল্যাণের অবারিত দ্বার উরস শরীফ বন্ধে কৌশলে প্রঞ্জাপনও জারি করে। এ গোষ্ঠী হাউজির সাথে উরস শরীফকে এক কাতারে রেখে এ প্রঞ্জাপন জারী করে। সামগ্রীকভাবে তাদের এহেন জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমনে ভীতি সঞ্চার হয়। রাগ ও ক্ষোভে জর্জরিত হয় দেশবাসী।

জাকের পার্টি তার স্বভাবজাত আদর্শ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটিয়ে চরমভাবে রুখে দাড়ায় এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ভয়ার্ত দেশবাসীকে মনোবল ও সাহস যোগায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী দেয় জাকের পার্টি। যখন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির অনেকেরই এ বিষয়ে সরাসরি স্পষ্ট বক্তব্য ছিল না, সে সময়ে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান একা বুক চিতিয়ে দাড়ান এ অপশক্তির বিরুদ্ধে। অবশেষে দেশ ও জাতি উদ্ধারে, সংসদীয় গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়া, ইসলামের নামে মানুষ হত্যা ও ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে তথাকথিত রাজনীতির চির অবসান ঘটাতে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল এক সমাবেশ করেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী।

রাজনীতিতে জাকের পার্টি
২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল সকাল থেকেই জাকের পার্টির নেতা, কর্মী, সমর্থকরা প্রচন্ড সাহস আর কমিটমেন্ট নিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল সহকারে সমবেত হতে থাকেন পল্টন ময়দানে। মিছিলে মিছিলে রাজধানী প্রকম্পিত হয় মুহুর্তে মুহুর্তে। এক পর্যায়ে যোগ দেয় চিহ্নিত অপশক্তির বিরুদ্ধে ফুসে উঠা জনতা। ফলে দুপুর থেকেই গোটা পল্টন আর আশপাশের সকল এলাকায আর তিলধারনের ঠাঁই ছিল না।

তবে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ সমাবেশ ঘিরে দেশবাসী চরম উৎসুক ছিলেন। কারণ সমাবেশের দু’দিন আগে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জণাকীর্ন এক সংবাদ সন্মেলনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান প্রথম এ অপশক্তির মুখোশ উন্মোচন করেন দেশবাসীর কাছে। এ সময় উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের অনেকেই জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের চরম সাহসী এ দৃষ্টান্তে যুগপৎ বিষ্মিত ও চমকিত হন। এক সংবাদকর্মী তার চমকের ঘোর কাটাতে একই প্রশ্ন ৩ বার উচ্চারণ করেন এবং জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ৩ বারই তার ঘোর কাটান। সংবাদ সন্মেলনের এ বক্তব্যই সারা দেশে মানুষকে জানিয়ে দেয় ভয়ের কারণ নেই, কান্ডারী আছে।

অবশেষে ৯ এপ্রিল সকল জল্পনা-কল্পনা,উৎকন্ঠা আর উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে বিশাল সমাবেশ থেকে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের অকুতোভয় সাহসী ও সময়োচিত দিক নির্দেশনা এবং বজ্র হুঙ্কার সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শঙ্কাগ্রস্ত দেশ বাসীর মনে আস্থা ফিরে আসে। সাহস ও মনোবল তৈরী হয়। স্বাধীনতার ইতিহাসে এভাবে কেউ আর দেশ ও জাতি স্বার্থ বিরোধী, মানবতা বিরোধী এবং ইসলামকে ব্যাবহারকারী এ অপশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারে নি।

পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী হাজার হাজার মানুষের এ সমাবেশে (বলা উচিত মহাসমাবেশ) তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার জোটের অংশীদার উল্লেখিত অপশক্তি জামায়াতকে ৪ দলীয় জোট থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার উদাত্ত আহবান জানান। অন্যথায় এ জন্য খালেদা জিয়া ও তার দলকে চরম খেসারত দিতে হবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। এ সময় হাজার হাজার মানুষের গগনবিদারী মুহুুর্মুহু শ্লোগানে ভিন্ন পরিবেশ তৈরী হয়।

আল মুজাদ্দেদ পত্রিকা
আল মুজাদ্দেদ পত্রিকা

জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সংসদীয় গণতন্ত্র সচল রাখতে এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্টানিক ভিত্তি দিতে দু’নেত্রীকে এক সাথে আলোচনায় বসার উদাত্ত আহবান জানান। একই সাথে দু’নেত্রীকে একে অপরের মুখ না দেখাদেখীর সংস্কৃতির অবসান ঘটানোরও আহবান জানান। তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, দু’নেত্রী একসাথে বসতে ব্যর্থ হলে এর পরিনাম ভোগ করতে হবে।

জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ দিক নির্দেশনা প্রকৃত অর্থে দেশবাসীর হৃদয়ের কথামালারই প্রতিধ্বনী ছিল। যাই হোক, পরবর্তীতে তার সতর্কবার্তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়। বাকীটা ইতিহাস। সকলেই জানেন।
পল্টনে বজ্র হুঙ্কার দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। দেশ ও জাতির স্বার্থসংরক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী হিসোবে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান বেড়িয়ে পড়লেন দেশময়।

১১টি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ এবং অগনিত পথসভায় বক্তৃতা করেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী। সমাবেশ ও পথসভাগুলোতে স্বতস্ফুর্ত জনতার ঢল , তাৎক্ষণিক সাড়া আর মিডিয়া কর্মীদের নড়েচরে বসা নতুন মাত্রা যোগ করে জাতীয় রাজনীতিতে।

নিজ ভূমি ফরিদপুরের সদরপুর, রাজবাড়ী, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, সিলেট ও বরিশালে বিশাল বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশকে স্থানীয় আপামর জনসাধারন তাদের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ বলে অভিহিত করে।

সমাবেশ গুলোতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান অভিন্ন বজ্র হুঙ্কার ও চেতনা জাগানিয়া বক্তব্য অব্যাহত রাখলেন। দীর্ঘ দিন পরে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ প্রাণ ভরে শুনলেন আশা, ভালোবাসা আর বেঁচে থাকার মূল মন্ত্রের কথা। নয়ন ভরে দেখলেন নতুন এক প্রাণ পুরুষকে। যার উপস্থিতিই কেমন যেন অজানিতে আনন্দ, আস্থা আর কর্মপ্রেরণার ঝরণাধারা সৃষ্টি করে।
জায়গায় জায়গায় পথসভাগুলোতে জনতা ছুটে আসলেন মানবতার নতুন প্রতীককে এক নজর দেখার আশায়। আবার দেখা গেলো, ঘন্টার পর ঘন্টা নারী, পুরুষ, শিশু কিশোর হাসিমুখে নাওয়া খাওয়া ভুলে অপেক্ষমান জায়গায় জায়গায়। অমিততেজে ভরপুর মহাপুরুষকে শুধু এক নজর দেখা আর মন্ত্রবাণী শোনা।

আশুগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ সহ বেশ কিছু জায়গায় পথসভা এত বিশাল হলো যে স্থানীয় লোকজন রায় দিলো, পথসভা নয়, এত বড় জনসভাই হয় নি এর আগে। আর জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যে সময় এসব জেলা সফর করলেন তখন ভরা বর্ষার মৌসুম। প্রতিদনই বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। কিন্তু সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় হলো, যেদিন যে পথে যে জেলায় জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যাচ্ছেন, আগে বা পরে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনোই বৃষ্টি সমাবেশের সময় হয় নি । এমনকি পথসভাগুলোতেও নয়। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জে সমাবেশের নির্ধারিত দিনে ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় প্রবল বৃষ্টি পাত হচ্ছিল।

বেলা গড়িয়ে দুপুর তাও বৃষ্টি থামছে না। এ বৃষ্টির মধ্যেই সদরঘাট থেকে বিশাল লঞ্চে যাত্রা করলেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। এখানেও জনগনের বিস্ময়কর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেলো। কিভাবে তারা জেনেছে নদী পথে আসছেন জনতার নেতা। আর তাই দলে দলে জনতা নৌকা, ইঞ্জিনচালিত বোট ও স্পীড বোটে করে প্রিয় নেতাকে মাঝ নদীতে জায়গায় জায়গায় প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জানালেন। সবচাইতে বিষ্ময়কর, জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে বহনকারী লঞ্চ মুন্সিগঞ্জের ঘাটের কাছে পৌঁছাতেই বৃষ্টি একেবারেই থেমে গেলো। অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জে চরম উৎকন্ঠা, প্রিয় নেতা কি আসবেন প্রবল বৃষ্টি মাথায় করে। আর বৃষ্টির মধ্যে জনসভাই হবে কি করে? আর জনসভার মাঠ তো বৃষ্টির পানিতে সয়লাব। যে মাত্র জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পা রাখলেন মুন্সিগঞ্জে বৃস্টি, পানি আর উৎকন্ঠা সব উবে গেলো। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হলো মুন্সিগঞ্জে।

আর একটি ব্যাপার, সমাবেশ কর্মসূচীর সময়টাতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ সফরকালীন সময়ে কিছু ঘটনা ঘটলো যা ইঙ্গিতময়।
প্রতিটি জায়গায় সমাবেশের আগে বা পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গ ও মিডিয়া কর্মী পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কৃতজ্ঞতা ও ভালোলাগার কথা অকপটে জানিয়েছেন। তিনিও তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ সমাবেশের পর থেকে জাকের পার্টি আরো শক্তিশালী, অপরিহার্য ও অর্থবহ হয়ে ধরা দেয় জনগনের কাছে। ফলে জাতীয় ইস্যুতে সমমনা বৃহৎ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল জাকের পার্টির সাথে তাদের পারস্পরিক সমঝোতা ও ভাববিনিময় আরো নিবিড় করে। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ইস্যূভিত্তিক জোটবদ্ধ রাজনীতির আবহ আরো ইতিবাচক হয়। এ ক্ষেত্রে জাকের পার্টি পার্টি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, তার চেয়েও বড় কথা জনগনের কাছে দেয়া প্রতিশুতি অনুযায়ী রাজনীতির এসব বাঁকের খুটিনাটি জনগনকে জানিয়ে রাখছিল ।

Zaker Party
এদিকে, ৪ দলীয় জোট সরকার ওলী আল্লাহগন প্রদর্শিত হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত উদারনৈতিক ইসলামী আদশের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক সাড়াষী ষড়যন্ত্র আরো পাকিয়ে তোলে। ফলে দেশের পীর মাশায়েখ, সুন্নী হক্কানী আলেম ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদগন চিন্তিত হয়ে পড়েন। এখানেও জাকের পার্টি ত্বরিৎ সহায়তার হাত বাড়ায়। তাদের আশ্বস্ত করে এবং সংগঠিত করে। এরই গতিধারায় পীর মাশায়েখ ও খানকাহ্, মাজার কেন্দ্রীক বুজুর্গানে দ্বীন ও তার অনুসারী সমর্থকদের নিয়ে গঠিত কয়েকটি সংগঠনের সাথে মতবিনিময় ও সমাবেশ করে। পরবর্তীতে তরিকত ফেডারেশনের সাথে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে জাকের পার্টি। সমাবেশে দেশের পীর মাশায়েখ, খানকাহ্, মাজার শরীফ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং তাদের অনুসারীরা দলে দলে সমবেত হন। সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ও তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সহ অন্যান্য পীর মাশায়েখগন বক্তৃতা করেন।

সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান উরস শরীফ বন্ধে ৪ দলীয় জোট সরকারের ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে তিনি সরকারকে এহেন ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্র পরিহারের আহবান জানান। একই সাথে দরগাহ্ , মাজারে বোমা হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্র বন্ধেরও দাবী জানান। তিনি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীদের চরম পরিনাম ভোগ করতে হবে। ওলী আল্লাহ প্রেমী এদেশের আপামর জনসাধারন তাদের চিরতরে পরিত্যাগ করবে। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পাশাপাশি দেশের সকল পীর মাশায়েখ, হক্কানী আলেম, ওলামা এবং দরগাহ্ , মাজার কেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব ও অনুসারীদের আশস্ত করে বলেন, জাকের পার্টি সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটাবে এবং ষড়যন্ত্রীদের অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে তাদের রক্ষা করবে।

জাকের পার্টির এ ভুমিকা পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রের অবসানে কার্যকর হয়ে ধরা দেয়।
এদিকে, তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের দেশ ও জাতি স্বার্থবিরোধী নজিরবিহীন কর্মকান্ড, অবাধ লুটপাট, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, সীমাহীন দুনীর্তি ও লাগাতার যথেচ্ছাচার দেশব্যাপী অসন্তোষ আরো প্রবল করে। এর প্রতিবাদ ও পরিত্রানে অবশেষে জাকের পার্টি রাজধানী ঢাকায় ২০০৬ সালের ২১ জুন মহাসমাবেশের ডাক দেয়।

মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানী সহ সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জাকের পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সভা, সমাবেশ, পথসভা, মিছিল ও ব্যাপক গনসংযোগ করে।
মহাসমাবেশের সফল আয়োজনে জাকের পার্টি রাজধানীতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সারা দেশ থেকে আসা জনতার বিশ্রাম, আহার ও পয়ঃপ্রণালী সুবিধা নিশ্চিতে ৫টি সুবিশাল ক্যাম্প তৈরী করে। সেখানে দলীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বিক আয়োজনে কঠোর পরিশ্রম করেন।

Zaker Party sufibad24
এরই গতিধারায় মহাসমাবেশের আগের দিন দুপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে জাকের পার্টির নেতৃত্বে বাস, ট্রাক, লঞ্চ, ট্রলার ও অন্যান্য বাহনের কাফেলা নিয়ে প্রবেশ করতে থাকে ঢাকায়। রাজধানীতে প্রবেশের ৫টি পয়েন্টে স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে তারা আশ্রয় নেয়। এভাবে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলা ব্যাতীত সারা দেশ থেকে সড়ক ও নৌ পথে অসংখ্য কাফেলা নিয়ে জনতা জড়ো হয় রাজধানীতে। সকাল হতেই ৫টি ক্যাম্পে জড়ো হওয়া জনতা, স্থান সংকুলান না হওয়ায় সারা রাত রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে নিজ নিজ বাস ও যানবাহনে অপেক্ষমান জনতা বর্ণাঢ্য সব মিছিল সহকারে হাজির হতে থাকে মহাসমাবেশস্থল পল্টন ময়দানে। চারদিক থেকে স্বতঃস্ফুর্ত জনতার অবিরাম মিছিলে ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়। মিছিলে মিছিলে এক পর্যায়ে দুপুরের আগেই পল্টন ময়দান উপচে আশপাশের সকল এলাকা জনতার স্রোতে সয়লাব হয়ে যায়।

মহাসমাবেশ শুরুর সাথে সাথে গোটা পল্টন, গুলিস্তান, দিলকুশা, মতিঝিলসহ আশপাশের সকল এলাকা জেগে উঠা মানুষের মহাসমুুদ্রে পরিনত হয়। ফলে ঢাকার আশপাশের অনেক জেলা, এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জনতাকেও কাফেলা নিয়ে রাজধানীর প্রবেশপথ ও বিভিন্ন পয়েন্টে দাড়িয়ে থাকতে হয়। তারা আর প্রবেশ করতে পারে নি । ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। এদিকে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যান্ড পার্টি সহকারে পৃথক পৃথক বিশাল বিশাল মিছিল সহকারে হাজির হয় পল্টন ময়দানে। যা মহাসমাবেশকে সার্বজনীন রূপ দেয়।

পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী মহাসেমাবেশস্থলে উপস্থিত হতেই কয়েক লাখ মানুষের হর্ষধ্বনী, করতালী আর মুহুর্মুহু গগন বিদারী শ্লোগানে ব্যতিক্রমী আবহ সৃষ্টি হয়।
জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মহাসমাবেশে তার সুদীর্ঘ দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্যে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের দেশ ও জাতিস্বার্থ বিরোধী সকল অপতৎপরতা, ইসলামের নামে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এবং ওলী আল্লাহ্গনের বিরুদ্ধে সব ধরনের ঔদ্ধত্য বন্ধের জোর দাবী জানান। তিনি জোট সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দলীয়করনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের ডাক দেন। একই সাথে জাতীয় সকল নেতার অবদান তুলে ধরে তাদের দলীয়করন ও চরিত্র হননের চেষ্টা থেকে রাজনৈতিক মহলকে বিরত থাকার আহবান জানান। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান এ সময় সমমনা কিংবা বৈরী সকল জাতীয় নেতার ভালো ভালো কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী দেশে গনতন্ত্রের চাকা সচল রাখতে বড় দু ’দলের দু’নেত্রীকে এক সাথে আলোচনায় বসে মহাসংকট থেকে জাতিকে উত্তরণের জোর আহবান জানান। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন, দু’নেত্রী এক সাথে বসতে ব্যর্থ হলে তাদের চরম পরিনতি ভোগ করতে হবে। এ সময় তিনি দু’নেত্রীর প্রতি আর্তি জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের (দেশবাসী) বাঁচান। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরীক মানবতা বিরোধী অপশক্তিকে জোট ও সরকার থেকে বের করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবারও জোর দাবী জানান।
স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির প্রচলিত গন্ডির বাইরে অন্যতম নজীর স্থাপন করে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান এ মহাসমাবেশ থেকে তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি সে সময়ে চলমান মহাসংকট থেকে মুক্তি ও স্থিতিশীল রাজনীতি সচল করতে বহু প্রশংসিত দিক নির্দেশনা দেন। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলারও আহবান জানান।

জাকের পার্টির এ মহাসমাবেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেশবিদদের সামনে। একই সাথে প্রচলিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জানালাও উন্মুক্ত করে দেয়। আর দেশবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করে।
পরবর্তীতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের ২১ জুনের দিক নির্দেশনা অমোঘ বাণী হয়ে ধরা দেয় ।
মহাসফল মহাসমাবেশের পরে ইস্যূভিত্তিক জোটবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনে স¤পৃক্ত হয় জাকের পার্টি। তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও জোট সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের দাবীতে রাজপথে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের গতিধারায় একদিন রাজধানীতে জাকের পার্টির শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ মিছিল বাংলামোটরে এলে পুলিশ বাঁধা দেয়। মিছিল সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে থাকে। হঠাৎ পুলিশ ব্যাপক লাঠি চার্জ করে মিছিলে। অতর্কিত লাঠি চার্জে অনেক নেতা, নেত্রী ও কর্মী আহত হন। পুলিশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গেফতার করে। জাকের পার্টি কোন দমন নিপীড়নকেই ভয় পায় নি।

জোটবদ্ধ আন্দোলনের গতিধারায় বিরোধী দল আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের ডাকা মহাসমাবেশে আমন্ত্রিত জাকের পার্টি চেয়ারম্যান তার অবস্থান তুলে ধরে সংকট উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন। বলা বাহুল্য, পল্টন ময়দানের এ মহাসমাবেশে জাকের পার্টির নেতা, কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।

জাতীয় রাজনীতিতে নানা সংকটে জাকের পার্টি যেমন এগিয়ে এসেছে, তেমনি জাতির নানা সম্ভাবনায়ও আলোড়িত হয়ে সমমনা বা বৈরীদের সাথে উদারমনে গলা মিলিয়েছে। মোদ্দা কথা, জাকের পার্টি সবই করেছে, এখনো করছে শুধু মাত্র দেশ ও জাতীর স্বার্থে। ইসলাম প্রিয় দেশবাসীর স্বার্থে। কেউ শুধরিয়ে এলে জাকের পার্টি তাকে অবজ্ঞা করে না । জাকের পার্টি বিভক্তি নয়, এক মহাস্রোতে সকলকে মিলাতে চায়। সে লক্ষ্যেই বিগত ২৪ বছর অপরিসীম ত্যাগ, তিতিক্ষা আর ধৈর্যের সুকঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ন হয়েছে জাকের পার্টি।

আরো পড়ুনঃ 

 

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

রাজনীতিতে জাকের পার্টি

আপডেট সময় : ১০:০০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন ও সংস্কারের রুপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টির এ অভিযাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। প্রথমত উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, কিছু করতে উদ্যোগীরা সবাই রাতারাতি সাফল্য চায়। সফলদের পিছনে কাতারবন্দী হতে আবার সম্ভব অসম্ভব সব ধরনের কৌশলও চলে।

দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক মঞ্চের অনেকেই ভালো নজরে দেখে নি জাকের পার্টির আত্মপ্রকাশ। অনেক ষড়যন্ত্র ও বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করেই জাকের পার্টিকে এগুতে হয়েছে।

তৃতীয়ত জাকের পার্টি কখনোই সন্ত্রাসী, বে আইনী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় নি। জায়গা দেয় নি কোন পেশী শক্তিকেও। তরুন ও যুব সমাজ এবং ছাত্রদের হাতে মাদক, অস্ত্র ও টাকাও তুলে দেয় নি। ফলে প্রচলিত এ সব মাধ্যম পরিহার করে শতভাগ আদর্শ নির্ভর দলটিকে তাই বিগত ২২ বছরে বিশেষ করে যাত্রা শুরুর দিনগুলোতে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাকের পাটি কে তার আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থা আর অবিচল থাকতে দেখে নিরুৎসাহিত করারও চেষ্টা করেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। তাদের পর্যবেক্ষণ ছিল, এ দেশে আদর্শের রাজনীতি চলে না। কিন্তু জাকের পার্টি এ সব অভিঞ্জ মহলের কোন মন্তব্য বা রাজনৈতিক বিশ্লেষনকে মাপকাঠি ধরে বসে থাকে নি। কারন, জাকের পার্টি এ ধারারই তো পরিবর্তন চায়। তা যত কষ্ট হয় হোক।

রাজনীতিতে জাকের পার্টি


শুরুর ২য় বছরে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জাকের পার্টি জাতীয় রাজনীতিতে আরো দৃঢ়তা নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করে। এ সময় থেকে দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। একই সাথে রাজনৈতিক সংকটেও কোন স্বার্থ বিবেচনা না করে শক্তিমত্তা অনুযায়ী কাজ করে যায় জাকের পার্টি। এ সময়ে কয়েকটি বছর নিবিড় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালে প্রথম অঙ্গসংগঠন (সহযোগী সংগঠন) গঠন করা হয়। ছাত্রফ্রন্ট নামে প্রথম অঙ্গসংগঠনের যাত্রা শুরু। তারপর একে একে যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন সুনিশ্চিতে বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন গঠন করা হয়। আবার অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বের করে আনারও লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়।

১৯৯৬ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় কয়েকটি সমাবেশ করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সমাবেশগুলোতে ভাষণ দেন। এর আগে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সুেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে রুপরেখা তুলে ধরে জাকের পার্টি। ১৯৯৭ সালের মাঝামাঝি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের এলাকায় বিশাল এক জনসমাবেশে সে সময়ে রাষ্ট্রে বিরাজমান নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। এসব অসঙ্গতি নিরসনে তিনি তাঁর দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ভবিষ্যৎ রুপরেখা তুলে ধরেন। যা দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কমিটমেন্টকে আরো শাণিত করে। প্রশংসিত হয় নানা মহলে।

এ বছর জাকের পার্টি দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামো আরো সুবিন্যস্ত ও সুবিস্তৃত করন এবং জনগনকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্বের অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করতে দেশব্যাপী ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মসূচী চালায়। এর অংশ হিসাবে জাকের পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহের (সহযোগী সংগঠন) কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে গঠিত ১৫ টি সাংগঠনিক টিম জেলা ও থানা পর্যায়ে ব্যাপক সফর করে। সফরকালে প্রতিটি এলাকায় জনসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্র থেকে প্রেরিত এসব সাংগঠনিক টিম এ সময় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে মতবিনিময়ও করেন।

এ সময়ে সৃষ্ট নানা রাজনৈতিক অসংগতিতে জাকের পার্টি সঙ্গত কারণেই আন্দোলনে নামে। রাজপথের কর্মসূচীতে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। তুমুল আন্দোলনের গতিধারায় রাজধানীতে বিশাল এক প্রতিবাদ মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা হয়, সন্ত্রাসীরা মিছিলে অনুপ্রবেশ করে গাড়ি ভাংচুর করে তা জাকের পার্টির নামে চালিয়ে দিতে চায়। অন্য দিকে, পুলিশ জাকের পার্টির নেতা কর্র্মীদের উপড় বেধড়ক লাঠি চার্জ করে । রেহাই পায় নি মহিলা কমীরাও। উপরন্তুু পুলিশ মিছিল থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েক জন নেতা কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। কারাবরন শেষে তারা মুক্ত হয়ে আসেন।
পরবর্তী দিনগুলোতে জাকের পার্টি জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, দলীয়করনসহ নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখে। রাজধানীর পল্টন ময়দান, ওসমানী উদ্যান, মুক্তাঙ্গনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সভা, সমাবেশ , প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখে। এ সময় কাউকেই ছেড়ে কথা বলে নি জাকের পার্টি।

এরই গতিধারায় এগিয়ে আসে সদরপুর- চরভদ্রাসন আসনে উপ-নির্বাচন। জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে আপামর জনসাধারনের চাপে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হয়। নিরঙ্কুশ বিজয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই প্রতিদ্বন্দীদের রক্তক্ষয়ী জিঘাংসার হাত থেকে জনগনের জানমাল রক্ষায় নির্বাচন বয়কট করে ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে অনন্য নজীর স্থাপন করেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান।

উপ-নির্বাচনে পর্দার আড়ালের নানা ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নির্বাচন বয়কটের অপরিহার্যতা জাতির কাছে তুলে ধরার কমিটমেন্ট থেকে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল এক সমাবেশ করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সমাবেশে সার্বিক দিক জাতির কাছে তুলে ধরেন।

এ সময়ে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান জাতীয় ইস্যুতে তার দৃঢ় অবস্থান অটুট রাখেন বরাবরের ন্যায়। রাজনীতির কঠিন গলিপথ আর চোরাবালির ফাঁদের বিপরীতে আন্দোলনরত নেতা, কর্মী, সমর্থকদের জন্য অনাবিল আনন্দ আর এক পশলা স্নিগ্ধ প্রশান্তির ফুরফুরে হাওয়া বয়ে আনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের ৪০ তম জন্মবার্ষির্কী। ব্যতিক্রমী আনন্দ, উচ্ছাস আর বাঁধভাঙ্গা খুশীর জোয়ারে ভাসে দেশে বিদেশে জাকের পার্টির সকল নেতা, কর্মীসহ সকলে। বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী মাঠসহ নানা জায়গায় ৩ দিনব্যাপী জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্ত দান, দুস্থদের মাঝে উন্নতমানের খাবার বিতরন ও শীতবস্ত্র বিতরন অন্যতম। ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকেই বাহারী ফুলের বর্ণিল তোড়া, ঝুড়ি হাতে নেতা, কর্মীদের ঢল নামে বনানীতে। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সন্ধ্যা থেকে শুরু করে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত সকলের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহন করেন।

এ আনন্দ উল্লাসের পরেই আসে মহাশোকের সে অধ্যায়। ২০০১ সালের ৩০ শে এপ্রিল দিবাগত রাত মোতাবেক ১ লা মে জাকের পার্টির মহান প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের কোটি কোটি শান্তিকামী মানুষের মহান মুর্শিদ বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব দারুল বাকায় তশরীফ নেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আকষ্মিক এ ঘটনায় জাকের পার্টির সর্বোচ্চ নেতা এবং জাকের পার্টি চেযারম্যানসহ দেশে বিদেশে জাকের পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ কোটি কোটি কল্যাণকামী মানূষ গভীর শোক সমুদ্রে নিমজ্জিত হন। চরম এ আঘাত সাংঘাতিক আঘাত হানে সকলের হৃদয় হেরায়। চূর্ণ বিচূর্ণ হয় ভাবনার সকল জগত। তারপর মহান দু’নেতার অসাধারন ঘুরে দাড়ানো আবার সকলকে ফিরিয়ে আনতে থাকে কাজের জগতে। মহান দু’নেতা অসামান্য দক্ষতায় শোককে শক্তিতে পরিনত করেন।

এ বছরেই আসে জাতীয় নির্বাচন। মহাশোকের চাদরে থাকা জাকের পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নাম মাত্র।
৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে বদল হতে থাকে রাজনীতি, সমাজনীতি ও ধর্মনীতির দৃশ্যপট। খাপছাড়া ভাব ক্রমশই প্রকট হতে থাকে। অবশেষে সকল ধর্মমত পথের মানুষের শান্তিপূর্ণ ভূমি বাংলাদেশে শুরু হয় ভয়াবহ কান্ডকারখানা। ২০০৪ সালে ২৯ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। ২০০৫ সালে ১৭ আগষ্ট সারা দেশে জেলা সদরগুলোতে একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। এ বোমা হামলার মধ্য দিয়েই নিজেদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি জানান দেয় দেশ ও জাতিস্বার্থ এবং সত্য ইসলাম বিরোধী জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

পিছনের ইন্ধনদাতা, আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের চেহারাও জনসমক্ষে পরিস্কার হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রী এ গোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামী জিহাদের নামে একদল মানুষকে বিপথগামী করার পাশাপাশি আবার এ দেশে মানবতা, সভ্যতা তথা ইসলামের সুরভি দানকারী ওলী আল্লাহদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রে নামে। তারা মাজারে মাজারে বোমা হামলা শুরু করে। একই সাথে মাজারে বহুদিনের সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনও ধংসসাধন শুরু করে। সে সময় জেলা জজ আদালতে নারকীয় সিরিজ বোমা হামলায় কয়েকজন জজ, পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ নিরীহ জনসাধারনও নিহত হয়।
এমনকি সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) ছাহেবের মাজার যিয়ারত করতে গেলে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এ গোষ্ঠীর বোমা হামলার শিকার হন। অন্যদিকে, শুধু বোমা হামলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি তারা। মানব কল্যাণের অবারিত দ্বার উরস শরীফ বন্ধে কৌশলে প্রঞ্জাপনও জারি করে। এ গোষ্ঠী হাউজির সাথে উরস শরীফকে এক কাতারে রেখে এ প্রঞ্জাপন জারী করে। সামগ্রীকভাবে তাদের এহেন জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমনে ভীতি সঞ্চার হয়। রাগ ও ক্ষোভে জর্জরিত হয় দেশবাসী।

জাকের পার্টি তার স্বভাবজাত আদর্শ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটিয়ে চরমভাবে রুখে দাড়ায় এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ভয়ার্ত দেশবাসীকে মনোবল ও সাহস যোগায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী দেয় জাকের পার্টি। যখন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির অনেকেরই এ বিষয়ে সরাসরি স্পষ্ট বক্তব্য ছিল না, সে সময়ে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান একা বুক চিতিয়ে দাড়ান এ অপশক্তির বিরুদ্ধে। অবশেষে দেশ ও জাতি উদ্ধারে, সংসদীয় গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়া, ইসলামের নামে মানুষ হত্যা ও ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে তথাকথিত রাজনীতির চির অবসান ঘটাতে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল এক সমাবেশ করেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী।

রাজনীতিতে জাকের পার্টি
২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল সকাল থেকেই জাকের পার্টির নেতা, কর্মী, সমর্থকরা প্রচন্ড সাহস আর কমিটমেন্ট নিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল সহকারে সমবেত হতে থাকেন পল্টন ময়দানে। মিছিলে মিছিলে রাজধানী প্রকম্পিত হয় মুহুর্তে মুহুর্তে। এক পর্যায়ে যোগ দেয় চিহ্নিত অপশক্তির বিরুদ্ধে ফুসে উঠা জনতা। ফলে দুপুর থেকেই গোটা পল্টন আর আশপাশের সকল এলাকায আর তিলধারনের ঠাঁই ছিল না।

তবে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ সমাবেশ ঘিরে দেশবাসী চরম উৎসুক ছিলেন। কারণ সমাবেশের দু’দিন আগে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জণাকীর্ন এক সংবাদ সন্মেলনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান প্রথম এ অপশক্তির মুখোশ উন্মোচন করেন দেশবাসীর কাছে। এ সময় উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের অনেকেই জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের চরম সাহসী এ দৃষ্টান্তে যুগপৎ বিষ্মিত ও চমকিত হন। এক সংবাদকর্মী তার চমকের ঘোর কাটাতে একই প্রশ্ন ৩ বার উচ্চারণ করেন এবং জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ৩ বারই তার ঘোর কাটান। সংবাদ সন্মেলনের এ বক্তব্যই সারা দেশে মানুষকে জানিয়ে দেয় ভয়ের কারণ নেই, কান্ডারী আছে।

অবশেষে ৯ এপ্রিল সকল জল্পনা-কল্পনা,উৎকন্ঠা আর উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে বিশাল সমাবেশ থেকে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের অকুতোভয় সাহসী ও সময়োচিত দিক নির্দেশনা এবং বজ্র হুঙ্কার সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শঙ্কাগ্রস্ত দেশ বাসীর মনে আস্থা ফিরে আসে। সাহস ও মনোবল তৈরী হয়। স্বাধীনতার ইতিহাসে এভাবে কেউ আর দেশ ও জাতি স্বার্থ বিরোধী, মানবতা বিরোধী এবং ইসলামকে ব্যাবহারকারী এ অপশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারে নি।

পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী হাজার হাজার মানুষের এ সমাবেশে (বলা উচিত মহাসমাবেশ) তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার জোটের অংশীদার উল্লেখিত অপশক্তি জামায়াতকে ৪ দলীয় জোট থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার উদাত্ত আহবান জানান। অন্যথায় এ জন্য খালেদা জিয়া ও তার দলকে চরম খেসারত দিতে হবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। এ সময় হাজার হাজার মানুষের গগনবিদারী মুহুুর্মুহু শ্লোগানে ভিন্ন পরিবেশ তৈরী হয়।

আল মুজাদ্দেদ পত্রিকা
আল মুজাদ্দেদ পত্রিকা

জাকের পার্টি চেয়ারম্যান সংসদীয় গণতন্ত্র সচল রাখতে এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্টানিক ভিত্তি দিতে দু’নেত্রীকে এক সাথে আলোচনায় বসার উদাত্ত আহবান জানান। একই সাথে দু’নেত্রীকে একে অপরের মুখ না দেখাদেখীর সংস্কৃতির অবসান ঘটানোরও আহবান জানান। তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, দু’নেত্রী একসাথে বসতে ব্যর্থ হলে এর পরিনাম ভোগ করতে হবে।

জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ দিক নির্দেশনা প্রকৃত অর্থে দেশবাসীর হৃদয়ের কথামালারই প্রতিধ্বনী ছিল। যাই হোক, পরবর্তীতে তার সতর্কবার্তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়। বাকীটা ইতিহাস। সকলেই জানেন।
পল্টনে বজ্র হুঙ্কার দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। দেশ ও জাতির স্বার্থসংরক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী হিসোবে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান বেড়িয়ে পড়লেন দেশময়।

১১টি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ এবং অগনিত পথসভায় বক্তৃতা করেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী। সমাবেশ ও পথসভাগুলোতে স্বতস্ফুর্ত জনতার ঢল , তাৎক্ষণিক সাড়া আর মিডিয়া কর্মীদের নড়েচরে বসা নতুন মাত্রা যোগ করে জাতীয় রাজনীতিতে।

নিজ ভূমি ফরিদপুরের সদরপুর, রাজবাড়ী, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, সিলেট ও বরিশালে বিশাল বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশকে স্থানীয় আপামর জনসাধারন তাদের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ বলে অভিহিত করে।

সমাবেশ গুলোতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান অভিন্ন বজ্র হুঙ্কার ও চেতনা জাগানিয়া বক্তব্য অব্যাহত রাখলেন। দীর্ঘ দিন পরে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ প্রাণ ভরে শুনলেন আশা, ভালোবাসা আর বেঁচে থাকার মূল মন্ত্রের কথা। নয়ন ভরে দেখলেন নতুন এক প্রাণ পুরুষকে। যার উপস্থিতিই কেমন যেন অজানিতে আনন্দ, আস্থা আর কর্মপ্রেরণার ঝরণাধারা সৃষ্টি করে।
জায়গায় জায়গায় পথসভাগুলোতে জনতা ছুটে আসলেন মানবতার নতুন প্রতীককে এক নজর দেখার আশায়। আবার দেখা গেলো, ঘন্টার পর ঘন্টা নারী, পুরুষ, শিশু কিশোর হাসিমুখে নাওয়া খাওয়া ভুলে অপেক্ষমান জায়গায় জায়গায়। অমিততেজে ভরপুর মহাপুরুষকে শুধু এক নজর দেখা আর মন্ত্রবাণী শোনা।

আশুগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ সহ বেশ কিছু জায়গায় পথসভা এত বিশাল হলো যে স্থানীয় লোকজন রায় দিলো, পথসভা নয়, এত বড় জনসভাই হয় নি এর আগে। আর জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যে সময় এসব জেলা সফর করলেন তখন ভরা বর্ষার মৌসুম। প্রতিদনই বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। কিন্তু সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় হলো, যেদিন যে পথে যে জেলায় জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যাচ্ছেন, আগে বা পরে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনোই বৃষ্টি সমাবেশের সময় হয় নি । এমনকি পথসভাগুলোতেও নয়। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জে সমাবেশের নির্ধারিত দিনে ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় প্রবল বৃষ্টি পাত হচ্ছিল।

বেলা গড়িয়ে দুপুর তাও বৃষ্টি থামছে না। এ বৃষ্টির মধ্যেই সদরঘাট থেকে বিশাল লঞ্চে যাত্রা করলেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। এখানেও জনগনের বিস্ময়কর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেলো। কিভাবে তারা জেনেছে নদী পথে আসছেন জনতার নেতা। আর তাই দলে দলে জনতা নৌকা, ইঞ্জিনচালিত বোট ও স্পীড বোটে করে প্রিয় নেতাকে মাঝ নদীতে জায়গায় জায়গায় প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জানালেন। সবচাইতে বিষ্ময়কর, জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে বহনকারী লঞ্চ মুন্সিগঞ্জের ঘাটের কাছে পৌঁছাতেই বৃষ্টি একেবারেই থেমে গেলো। অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জে চরম উৎকন্ঠা, প্রিয় নেতা কি আসবেন প্রবল বৃষ্টি মাথায় করে। আর বৃষ্টির মধ্যে জনসভাই হবে কি করে? আর জনসভার মাঠ তো বৃষ্টির পানিতে সয়লাব। যে মাত্র জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পা রাখলেন মুন্সিগঞ্জে বৃস্টি, পানি আর উৎকন্ঠা সব উবে গেলো। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হলো মুন্সিগঞ্জে।

আর একটি ব্যাপার, সমাবেশ কর্মসূচীর সময়টাতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ সফরকালীন সময়ে কিছু ঘটনা ঘটলো যা ইঙ্গিতময়।
প্রতিটি জায়গায় সমাবেশের আগে বা পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গ ও মিডিয়া কর্মী পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কৃতজ্ঞতা ও ভালোলাগার কথা অকপটে জানিয়েছেন। তিনিও তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের এ সমাবেশের পর থেকে জাকের পার্টি আরো শক্তিশালী, অপরিহার্য ও অর্থবহ হয়ে ধরা দেয় জনগনের কাছে। ফলে জাতীয় ইস্যুতে সমমনা বৃহৎ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল জাকের পার্টির সাথে তাদের পারস্পরিক সমঝোতা ও ভাববিনিময় আরো নিবিড় করে। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ইস্যূভিত্তিক জোটবদ্ধ রাজনীতির আবহ আরো ইতিবাচক হয়। এ ক্ষেত্রে জাকের পার্টি পার্টি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, তার চেয়েও বড় কথা জনগনের কাছে দেয়া প্রতিশুতি অনুযায়ী রাজনীতির এসব বাঁকের খুটিনাটি জনগনকে জানিয়ে রাখছিল ।

Zaker Party
এদিকে, ৪ দলীয় জোট সরকার ওলী আল্লাহগন প্রদর্শিত হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত উদারনৈতিক ইসলামী আদশের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক সাড়াষী ষড়যন্ত্র আরো পাকিয়ে তোলে। ফলে দেশের পীর মাশায়েখ, সুন্নী হক্কানী আলেম ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদগন চিন্তিত হয়ে পড়েন। এখানেও জাকের পার্টি ত্বরিৎ সহায়তার হাত বাড়ায়। তাদের আশ্বস্ত করে এবং সংগঠিত করে। এরই গতিধারায় পীর মাশায়েখ ও খানকাহ্, মাজার কেন্দ্রীক বুজুর্গানে দ্বীন ও তার অনুসারী সমর্থকদের নিয়ে গঠিত কয়েকটি সংগঠনের সাথে মতবিনিময় ও সমাবেশ করে। পরবর্তীতে তরিকত ফেডারেশনের সাথে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে জাকের পার্টি। সমাবেশে দেশের পীর মাশায়েখ, খানকাহ্, মাজার শরীফ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং তাদের অনুসারীরা দলে দলে সমবেত হন। সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ও তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সহ অন্যান্য পীর মাশায়েখগন বক্তৃতা করেন।

সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান উরস শরীফ বন্ধে ৪ দলীয় জোট সরকারের ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে তিনি সরকারকে এহেন ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্র পরিহারের আহবান জানান। একই সাথে দরগাহ্ , মাজারে বোমা হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্র বন্ধেরও দাবী জানান। তিনি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীদের চরম পরিনাম ভোগ করতে হবে। ওলী আল্লাহ প্রেমী এদেশের আপামর জনসাধারন তাদের চিরতরে পরিত্যাগ করবে। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পাশাপাশি দেশের সকল পীর মাশায়েখ, হক্কানী আলেম, ওলামা এবং দরগাহ্ , মাজার কেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব ও অনুসারীদের আশস্ত করে বলেন, জাকের পার্টি সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটাবে এবং ষড়যন্ত্রীদের অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে তাদের রক্ষা করবে।

জাকের পার্টির এ ভুমিকা পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রের অবসানে কার্যকর হয়ে ধরা দেয়।
এদিকে, তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের দেশ ও জাতি স্বার্থবিরোধী নজিরবিহীন কর্মকান্ড, অবাধ লুটপাট, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, সীমাহীন দুনীর্তি ও লাগাতার যথেচ্ছাচার দেশব্যাপী অসন্তোষ আরো প্রবল করে। এর প্রতিবাদ ও পরিত্রানে অবশেষে জাকের পার্টি রাজধানী ঢাকায় ২০০৬ সালের ২১ জুন মহাসমাবেশের ডাক দেয়।

মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানী সহ সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জাকের পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সভা, সমাবেশ, পথসভা, মিছিল ও ব্যাপক গনসংযোগ করে।
মহাসমাবেশের সফল আয়োজনে জাকের পার্টি রাজধানীতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সারা দেশ থেকে আসা জনতার বিশ্রাম, আহার ও পয়ঃপ্রণালী সুবিধা নিশ্চিতে ৫টি সুবিশাল ক্যাম্প তৈরী করে। সেখানে দলীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বিক আয়োজনে কঠোর পরিশ্রম করেন।

Zaker Party sufibad24
এরই গতিধারায় মহাসমাবেশের আগের দিন দুপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে জাকের পার্টির নেতৃত্বে বাস, ট্রাক, লঞ্চ, ট্রলার ও অন্যান্য বাহনের কাফেলা নিয়ে প্রবেশ করতে থাকে ঢাকায়। রাজধানীতে প্রবেশের ৫টি পয়েন্টে স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে তারা আশ্রয় নেয়। এভাবে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলা ব্যাতীত সারা দেশ থেকে সড়ক ও নৌ পথে অসংখ্য কাফেলা নিয়ে জনতা জড়ো হয় রাজধানীতে। সকাল হতেই ৫টি ক্যাম্পে জড়ো হওয়া জনতা, স্থান সংকুলান না হওয়ায় সারা রাত রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে নিজ নিজ বাস ও যানবাহনে অপেক্ষমান জনতা বর্ণাঢ্য সব মিছিল সহকারে হাজির হতে থাকে মহাসমাবেশস্থল পল্টন ময়দানে। চারদিক থেকে স্বতঃস্ফুর্ত জনতার অবিরাম মিছিলে ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়। মিছিলে মিছিলে এক পর্যায়ে দুপুরের আগেই পল্টন ময়দান উপচে আশপাশের সকল এলাকা জনতার স্রোতে সয়লাব হয়ে যায়।

মহাসমাবেশ শুরুর সাথে সাথে গোটা পল্টন, গুলিস্তান, দিলকুশা, মতিঝিলসহ আশপাশের সকল এলাকা জেগে উঠা মানুষের মহাসমুুদ্রে পরিনত হয়। ফলে ঢাকার আশপাশের অনেক জেলা, এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জনতাকেও কাফেলা নিয়ে রাজধানীর প্রবেশপথ ও বিভিন্ন পয়েন্টে দাড়িয়ে থাকতে হয়। তারা আর প্রবেশ করতে পারে নি । ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। এদিকে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যান্ড পার্টি সহকারে পৃথক পৃথক বিশাল বিশাল মিছিল সহকারে হাজির হয় পল্টন ময়দানে। যা মহাসমাবেশকে সার্বজনীন রূপ দেয়।

পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী মহাসেমাবেশস্থলে উপস্থিত হতেই কয়েক লাখ মানুষের হর্ষধ্বনী, করতালী আর মুহুর্মুহু গগন বিদারী শ্লোগানে ব্যতিক্রমী আবহ সৃষ্টি হয়।
জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মহাসমাবেশে তার সুদীর্ঘ দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্যে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের দেশ ও জাতিস্বার্থ বিরোধী সকল অপতৎপরতা, ইসলামের নামে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এবং ওলী আল্লাহ্গনের বিরুদ্ধে সব ধরনের ঔদ্ধত্য বন্ধের জোর দাবী জানান। তিনি জোট সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দলীয়করনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের ডাক দেন। একই সাথে জাতীয় সকল নেতার অবদান তুলে ধরে তাদের দলীয়করন ও চরিত্র হননের চেষ্টা থেকে রাজনৈতিক মহলকে বিরত থাকার আহবান জানান। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান এ সময় সমমনা কিংবা বৈরী সকল জাতীয় নেতার ভালো ভালো কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী দেশে গনতন্ত্রের চাকা সচল রাখতে বড় দু ’দলের দু’নেত্রীকে এক সাথে আলোচনায় বসে মহাসংকট থেকে জাতিকে উত্তরণের জোর আহবান জানান। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন, দু’নেত্রী এক সাথে বসতে ব্যর্থ হলে তাদের চরম পরিনতি ভোগ করতে হবে। এ সময় তিনি দু’নেত্রীর প্রতি আর্তি জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের (দেশবাসী) বাঁচান। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরীক মানবতা বিরোধী অপশক্তিকে জোট ও সরকার থেকে বের করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবারও জোর দাবী জানান।
স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির প্রচলিত গন্ডির বাইরে অন্যতম নজীর স্থাপন করে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান এ মহাসমাবেশ থেকে তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি সে সময়ে চলমান মহাসংকট থেকে মুক্তি ও স্থিতিশীল রাজনীতি সচল করতে বহু প্রশংসিত দিক নির্দেশনা দেন। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলারও আহবান জানান।

জাকের পার্টির এ মহাসমাবেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেশবিদদের সামনে। একই সাথে প্রচলিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জানালাও উন্মুক্ত করে দেয়। আর দেশবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করে।
পরবর্তীতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের ২১ জুনের দিক নির্দেশনা অমোঘ বাণী হয়ে ধরা দেয় ।
মহাসফল মহাসমাবেশের পরে ইস্যূভিত্তিক জোটবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনে স¤পৃক্ত হয় জাকের পার্টি। তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও জোট সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের দাবীতে রাজপথে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের গতিধারায় একদিন রাজধানীতে জাকের পার্টির শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ মিছিল বাংলামোটরে এলে পুলিশ বাঁধা দেয়। মিছিল সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে থাকে। হঠাৎ পুলিশ ব্যাপক লাঠি চার্জ করে মিছিলে। অতর্কিত লাঠি চার্জে অনেক নেতা, নেত্রী ও কর্মী আহত হন। পুলিশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গেফতার করে। জাকের পার্টি কোন দমন নিপীড়নকেই ভয় পায় নি।

জোটবদ্ধ আন্দোলনের গতিধারায় বিরোধী দল আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের ডাকা মহাসমাবেশে আমন্ত্রিত জাকের পার্টি চেয়ারম্যান তার অবস্থান তুলে ধরে সংকট উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন। বলা বাহুল্য, পল্টন ময়দানের এ মহাসমাবেশে জাকের পার্টির নেতা, কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।

জাতীয় রাজনীতিতে নানা সংকটে জাকের পার্টি যেমন এগিয়ে এসেছে, তেমনি জাতির নানা সম্ভাবনায়ও আলোড়িত হয়ে সমমনা বা বৈরীদের সাথে উদারমনে গলা মিলিয়েছে। মোদ্দা কথা, জাকের পার্টি সবই করেছে, এখনো করছে শুধু মাত্র দেশ ও জাতীর স্বার্থে। ইসলাম প্রিয় দেশবাসীর স্বার্থে। কেউ শুধরিয়ে এলে জাকের পার্টি তাকে অবজ্ঞা করে না । জাকের পার্টি বিভক্তি নয়, এক মহাস্রোতে সকলকে মিলাতে চায়। সে লক্ষ্যেই বিগত ২৪ বছর অপরিসীম ত্যাগ, তিতিক্ষা আর ধৈর্যের সুকঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ন হয়েছে জাকের পার্টি।

আরো পড়ুনঃ