ঢাকা ০৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুরআন সুন্নাহ এর দৃষ্টিতে নবী ওলীগণের শাফায়াত

  • আপডেট সময় : ১১:২১:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ২৩৯৭ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুরআন সুন্নাহ এর দৃষ্টিতে নবী ওলীগণের শাফায়াত

*বর্তমান সমাজে বড় একটি ফিতনা বের হয়েছে, তাহল: অনেকে বলেন, নবী-রাসূল ও ওলী আল্লাহগণ শাফায়াত করতে পারবেনা। অনেকে বলে থাকেন, পীর সাহেবেরই উপায় নাই মুরীদ বাছাইবে কিভাবে। নবীরাই বলবে ইয়া নাফছি! ইয়া নাফছি! ওলীরাত হিসাবের বাইরে। আমরা দেখব পবিত্র কোরআন ও হাদিস এ ব্যাপারে কি বলে।

দলিল : من ذالذى يشفع عنده الا باذنه : কে আছে আল্লাহর কাছে ‎অনুমতি ব্যতিত শাফায়াত করবে (আয়াতুল কুরসীর অংশ)। এই আয়াত দ্বারা বুজা যায়, আল্লাহর অনুমতিতে শাফায়াত করা হবে।

‫عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم شفاعة لاهل  الكبائر من امتى

‎ অর্থ: হজরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মতের কবীরা গোনাহগারের জন্য আমার শাফায়াত।

(আবু দাউদ, ২য় জি: ৬৫২ পৃঃ; তিরমিজি শরিফ, ২য় জিঃ ৭০ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৪ পৃঃ; মেরকাত, ১০ম খন্ড, ২৭০ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২১৩/৩; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬‬‎ পৃঃ; হাকেম শরিফ, ১ম খন্ড, ১০২ পৃঃ; তাবারানী আওছাতে, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২০৫ পৃঃ; জামেউছ ছাগীর, ২য় জিঃ ৩০১ পৃঃ)।

*ঈমাম তিরমিজি ও হাকেম (রঃ) বলেছেন: هذا حديث حسن صحيح অর্থাৎ এই হাদিস হাছান-সহি।

* এ ব্যাপারে হজরত আনাছ (রাঃ) হতেও বর্ণিত আছে।

দলিলঃ  হজরত আবু ছাইদ (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্বাগ্রে আমার শাফায়াত কবুল করা হবে এতে আমার কোন ফখর নেই ।

(ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেরকাত ১০ম খন্ড, ৪২১, ১৪২ পৃঃ; সহি মুসলীম, আবু দাউদ, হা: নং ৪৬৭৩: তিরমিজি, হাঃ নং ৩৩৬১৫; দারেমী শরিফ, ১ম খন্ড, ৪১ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২/৩; শিফা শরিফ, ১ম জিঃ ২৪৫ পৃঃ; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩৮২ পৃঃ) সনদ সহি।‬‎

দলিলঃ ‎ ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: ক্বিয়ামতের দিন ৩ শ্রেণীর লোক শাফায়াত করবে, সকল নবীগণ, আলিমগণ ও শহীদগণ ।

(ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৫ পৃঃ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ২৮০ পৃঃ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৫ পৃঃ; বায়হাক্বী; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ২৮ তম জিঃ ২৯৯ পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত)। মুসনাদে বাজ্জার শরিফে অতিরিক্ত আছে: ثم المؤذن অর্থাৎ, মুয়াজ্জিনগণও শাফায়াত করবে (তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ)।‬‎

আরো পড়ুনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠের ফজিলত

*আলিম কারা এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’লা বলেন : انما يخشى الله من عباده – العلماء *অর্থঃ নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে তারাই ‘আলিম’। অন্যত্র এক আয়াতে; সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের কোন ভয় নেই – এবং তাঁরা চিন্তিত হবেনা, তারাই ঈমানদার ও আল্লাহকে ভয় করে (সূরা – ইউনূছ, ৬২-৬৩)।

*এই আয়াত দ্বারা বুজা যায়, আল্লাহর ওলীগণই আল্লাহকে ভয় করেন, – আর যারা আল্লাহকে ভয় করেন তাঁরাই ‘আলিম’। সুতরাং আলিমগণ বলতে • আল্লাহর ওলীদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারন তাঁরাই আল্লাহকে ভয় করে। ■ তাই আলিমগণ বলতে আল্লাহর ওলীগণই হাশরের দিন শাফায়াত করবেন।

‎‫عن عبد الله بن الجدعاء انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم :a# يقول ليدخلن الجنة بشفاعة رجل من امتى أكثر من بنى تميم قالوا يا – رسول الله سواك قال سواى *

অর্থঃ হজরত আব্দুল ইবনে জাদ (রাঃ)‬‎ বলেন, আমি নবী করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আমার একজন উম্মতের শাফায়াতে ‘বনী তামিম’ গোত্রের লোকের চাইতে অধিক লোক জান্নাতে যাবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহা কি আপনি ব্যতিত অন্য কেউ? নবীজি বললেন: হ্যাঁ আমি ব্যতিত ।

(তিরমিজি শরিফ, ২য় জিঃ ৭০ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৪ পৃঃ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ২৭২ পৃঃ; দারেমী শরিফ, ২য় খন্ড, ৪২৩ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ৪৬৯/৩; হাকেম, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃঃ) ঈমাম তিরমিজি বলেন: هذا حديث حسن صحيح অর্থাৎ, এই হাদিস হাছান-সহি।

*এই হাদিস দ্বারা নবী পাকের উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়, অর্থাৎ, নবী পাক (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) এর উম্মতগণও শাফায়াত করতে পারবেন।

‎‫ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان من امتى من يدخل ‫الجنة بشفاعة أكثر من مضر ‬‎

 *অর্থঃ নিশ্চয় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে এক ব্যক্তি হবে যার শাফায়াতে ‘মোদ্বার’ গোত্রের চাইতেও অধিক লোক জান্নাতে যাবে (ইবনে মাজাহ, ৩৩১ পৃঃ; মুস্তাদরাকে হাকেম শরিফ, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃঃ) সহি হাদিস।‬‎

*এই হাদিস সম্পর্কে ঈমাম হাকেম বলেন: هذا حديث صحيح الاسناد على شرط مسلم *এই হাদিস ঈমাম মুসলীমের শর্তানুযায়ী সহি (হাকেম, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃঃ)। এই হাদিস দ্বারাও নবীজির উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়।

দলিলঃ  হাছান বছরী (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম)। বলেছেন: উছমান ইবনে আফফান (রাঃ) কিয়ামতের দিন ‘রবীয়া ও মোদ্বার’ গোত্রের সমপরিমান লোকদের শাফায়াত করবে (তিরমিজি, ২য় জি: ৭০ পৃঃ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; তাবারানী; বায়হাক্বী)। বায়হাক্বী ও তাবারানীতে হাদিসটি হজরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে মরফু রুপে সহি সনদে উল্লেখ আছে।

*এই হাদিস দ্বারাও নবীপাকের উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়।

‎‫عن ابي سعيد ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان من : امتى من يشفع للفئام ومنهم من يشفع للقبيلة ومنهم من يشفع للعصبة ومنهم من يشفع للرجل حتى يدخلوا الجنة

অর্থঃ হজরত আবু ছাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উন্নাতের। এমন লোক আছে যে বহু সংখ্যক লোক শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একটি গোত্রের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে কিছু সংখ্যক লোকের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একজন শাফায়াত করবে, শেষ পর্যন্ত তাঁদের শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।

(তিরমিজি, ২য় জিঃ ৭০পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৫ পৃঃ; মেরকাত, ১০ম খন্ড, ২৭২ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২০০/৩; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৬ তম জিঃ ৬৩৫ পৃঃ)।

আরো পড়ুনঃ সহীহ্ হাদিসের আলোকে কবর যিয়ারত কী জায়েয

‎‫দলিলঃ  হজরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন: হাশরের দিন আলিমগণকে বলা হবে তোমার শিষ্যদেরকে শাফায়াত কর, যদিও তাদের সংখ্যা আসমানের তারার সমানও হয় (দায়লামী শরিফ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; তাফছিরে মারেফুল কোরআন)।‬‎

*এই হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয়, নবী করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) এর উম্মতের অন্তর্ভূক্ত আলিমগণও শাফায়াত করতে পারবে। আর প্রকৃত আলিম তাঁরাই, যারা আল্লাহর ওলী। ‘কারন আল্লাহর ওলীগণই আল্লাহকে ভয় করেন, আর যারা আল্লাহকে ভয় করেন তাঁরাই ‘আলিম’

দলিলঃ রাসূলে পাক (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: একজন শহিদ তাঁর বংশ হতে ৭০ জন শাফায়াত করবে (তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ২০৬ পৃঃ; আবু দাউদ) সনদ সহি।‬‎

দলিলঃ হজরত আলী (রাঃ( বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: যে কুরআন পাঠ করে ও মুখস্থ রাখে, হালালকে হালাল জানে ও হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর বংশের এমন দশজনকে শাফায়াত করবে যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব ছিল (মেসকাত, ১৮৭ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ১৪৮/১; দারেমী শরিফ; তিরমিজি শরিফ; ইবনে মাজাহ; মেরকাত, ৫ম খন্ড, ৪১ পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত)।‬‎

*এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয় যে, হাফিজে কোরআন ও নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতকারী নিজের বংশের দশজনকে শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

*সুতরাং নবী-রাসূলগণ, শোহাদায়ে কেরামগণ, তাক্বওয়াশীল আলিম তথা আল্লাহর ওলীগণ, হাফেজে কোরআন বিবিধ শ্রেণীর লোকেরা তাঁদের আপনজনদের শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কুরআন সুন্নাহ এর দৃষ্টিতে নবী ওলীগণের শাফায়াত

আপডেট সময় : ১১:২১:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

কুরআন সুন্নাহ এর দৃষ্টিতে নবী ওলীগণের শাফায়াত

*বর্তমান সমাজে বড় একটি ফিতনা বের হয়েছে, তাহল: অনেকে বলেন, নবী-রাসূল ও ওলী আল্লাহগণ শাফায়াত করতে পারবেনা। অনেকে বলে থাকেন, পীর সাহেবেরই উপায় নাই মুরীদ বাছাইবে কিভাবে। নবীরাই বলবে ইয়া নাফছি! ইয়া নাফছি! ওলীরাত হিসাবের বাইরে। আমরা দেখব পবিত্র কোরআন ও হাদিস এ ব্যাপারে কি বলে।

দলিল : من ذالذى يشفع عنده الا باذنه : কে আছে আল্লাহর কাছে ‎অনুমতি ব্যতিত শাফায়াত করবে (আয়াতুল কুরসীর অংশ)। এই আয়াত দ্বারা বুজা যায়, আল্লাহর অনুমতিতে শাফায়াত করা হবে।

‫عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم شفاعة لاهل  الكبائر من امتى

‎ অর্থ: হজরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মতের কবীরা গোনাহগারের জন্য আমার শাফায়াত।

(আবু দাউদ, ২য় জি: ৬৫২ পৃঃ; তিরমিজি শরিফ, ২য় জিঃ ৭০ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৪ পৃঃ; মেরকাত, ১০ম খন্ড, ২৭০ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২১৩/৩; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬‬‎ পৃঃ; হাকেম শরিফ, ১ম খন্ড, ১০২ পৃঃ; তাবারানী আওছাতে, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২০৫ পৃঃ; জামেউছ ছাগীর, ২য় জিঃ ৩০১ পৃঃ)।

*ঈমাম তিরমিজি ও হাকেম (রঃ) বলেছেন: هذا حديث حسن صحيح অর্থাৎ এই হাদিস হাছান-সহি।

* এ ব্যাপারে হজরত আনাছ (রাঃ) হতেও বর্ণিত আছে।

দলিলঃ  হজরত আবু ছাইদ (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্বাগ্রে আমার শাফায়াত কবুল করা হবে এতে আমার কোন ফখর নেই ।

(ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেরকাত ১০ম খন্ড, ৪২১, ১৪২ পৃঃ; সহি মুসলীম, আবু দাউদ, হা: নং ৪৬৭৩: তিরমিজি, হাঃ নং ৩৩৬১৫; দারেমী শরিফ, ১ম খন্ড, ৪১ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২/৩; শিফা শরিফ, ১ম জিঃ ২৪৫ পৃঃ; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩৮২ পৃঃ) সনদ সহি।‬‎

দলিলঃ ‎ ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: ক্বিয়ামতের দিন ৩ শ্রেণীর লোক শাফায়াত করবে, সকল নবীগণ, আলিমগণ ও শহীদগণ ।

(ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৫ পৃঃ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ২৮০ পৃঃ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৫ পৃঃ; বায়হাক্বী; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ২৮ তম জিঃ ২৯৯ পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত)। মুসনাদে বাজ্জার শরিফে অতিরিক্ত আছে: ثم المؤذن অর্থাৎ, মুয়াজ্জিনগণও শাফায়াত করবে (তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ)।‬‎

আরো পড়ুনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠের ফজিলত

*আলিম কারা এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’লা বলেন : انما يخشى الله من عباده – العلماء *অর্থঃ নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে তারাই ‘আলিম’। অন্যত্র এক আয়াতে; সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের কোন ভয় নেই – এবং তাঁরা চিন্তিত হবেনা, তারাই ঈমানদার ও আল্লাহকে ভয় করে (সূরা – ইউনূছ, ৬২-৬৩)।

*এই আয়াত দ্বারা বুজা যায়, আল্লাহর ওলীগণই আল্লাহকে ভয় করেন, – আর যারা আল্লাহকে ভয় করেন তাঁরাই ‘আলিম’। সুতরাং আলিমগণ বলতে • আল্লাহর ওলীদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারন তাঁরাই আল্লাহকে ভয় করে। ■ তাই আলিমগণ বলতে আল্লাহর ওলীগণই হাশরের দিন শাফায়াত করবেন।

‎‫عن عبد الله بن الجدعاء انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم :a# يقول ليدخلن الجنة بشفاعة رجل من امتى أكثر من بنى تميم قالوا يا – رسول الله سواك قال سواى *

অর্থঃ হজরত আব্দুল ইবনে জাদ (রাঃ)‬‎ বলেন, আমি নবী করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আমার একজন উম্মতের শাফায়াতে ‘বনী তামিম’ গোত্রের লোকের চাইতে অধিক লোক জান্নাতে যাবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহা কি আপনি ব্যতিত অন্য কেউ? নবীজি বললেন: হ্যাঁ আমি ব্যতিত ।

(তিরমিজি শরিফ, ২য় জিঃ ৭০ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ৩৩০ পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৪ পৃঃ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ২৭২ পৃঃ; দারেমী শরিফ, ২য় খন্ড, ৪২৩ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ৪৬৯/৩; হাকেম, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃঃ) ঈমাম তিরমিজি বলেন: هذا حديث حسن صحيح অর্থাৎ, এই হাদিস হাছান-সহি।

*এই হাদিস দ্বারা নবী পাকের উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়, অর্থাৎ, নবী পাক (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) এর উম্মতগণও শাফায়াত করতে পারবেন।

‎‫ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان من امتى من يدخل ‫الجنة بشفاعة أكثر من مضر ‬‎

 *অর্থঃ নিশ্চয় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে এক ব্যক্তি হবে যার শাফায়াতে ‘মোদ্বার’ গোত্রের চাইতেও অধিক লোক জান্নাতে যাবে (ইবনে মাজাহ, ৩৩১ পৃঃ; মুস্তাদরাকে হাকেম শরিফ, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃঃ) সহি হাদিস।‬‎

*এই হাদিস সম্পর্কে ঈমাম হাকেম বলেন: هذا حديث صحيح الاسناد على شرط مسلم *এই হাদিস ঈমাম মুসলীমের শর্তানুযায়ী সহি (হাকেম, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃঃ)। এই হাদিস দ্বারাও নবীজির উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়।

দলিলঃ  হাছান বছরী (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম)। বলেছেন: উছমান ইবনে আফফান (রাঃ) কিয়ামতের দিন ‘রবীয়া ও মোদ্বার’ গোত্রের সমপরিমান লোকদের শাফায়াত করবে (তিরমিজি, ২য় জি: ৭০ পৃঃ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; তাবারানী; বায়হাক্বী)। বায়হাক্বী ও তাবারানীতে হাদিসটি হজরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে মরফু রুপে সহি সনদে উল্লেখ আছে।

*এই হাদিস দ্বারাও নবীপাকের উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়।

‎‫عن ابي سعيد ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان من : امتى من يشفع للفئام ومنهم من يشفع للقبيلة ومنهم من يشفع للعصبة ومنهم من يشفع للرجل حتى يدخلوا الجنة

অর্থঃ হজরত আবু ছাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: আমার উন্নাতের। এমন লোক আছে যে বহু সংখ্যক লোক শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একটি গোত্রের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে কিছু সংখ্যক লোকের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একজন শাফায়াত করবে, শেষ পর্যন্ত তাঁদের শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।

(তিরমিজি, ২য় জিঃ ৭০পৃঃ; মেসকাত, ৪৯৫ পৃঃ; মেরকাত, ১০ম খন্ড, ২৭২ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ২০০/৩; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৬ তম জিঃ ৬৩৫ পৃঃ)।

আরো পড়ুনঃ সহীহ্ হাদিসের আলোকে কবর যিয়ারত কী জায়েয

‎‫দলিলঃ  হজরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন: হাশরের দিন আলিমগণকে বলা হবে তোমার শিষ্যদেরকে শাফায়াত কর, যদিও তাদের সংখ্যা আসমানের তারার সমানও হয় (দায়লামী শরিফ; তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; তাফছিরে মারেফুল কোরআন)।‬‎

*এই হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয়, নবী করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) এর উম্মতের অন্তর্ভূক্ত আলিমগণও শাফায়াত করতে পারবে। আর প্রকৃত আলিম তাঁরাই, যারা আল্লাহর ওলী। ‘কারন আল্লাহর ওলীগণই আল্লাহকে ভয় করেন, আর যারা আল্লাহকে ভয় করেন তাঁরাই ‘আলিম’

দলিলঃ রাসূলে পাক (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: একজন শহিদ তাঁর বংশ হতে ৭০ জন শাফায়াত করবে (তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড, ৩২৬ পৃঃ; ইবনে মাজাহ, ২০৬ পৃঃ; আবু দাউদ) সনদ সহি।‬‎

দলিলঃ হজরত আলী (রাঃ( বলেন, রাসূলে করিম (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন: যে কুরআন পাঠ করে ও মুখস্থ রাখে, হালালকে হালাল জানে ও হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর বংশের এমন দশজনকে শাফায়াত করবে যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব ছিল (মেসকাত, ১৮৭ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ১৪৮/১; দারেমী শরিফ; তিরমিজি শরিফ; ইবনে মাজাহ; মেরকাত, ৫ম খন্ড, ৪১ পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত)।‬‎

*এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয় যে, হাফিজে কোরআন ও নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতকারী নিজের বংশের দশজনকে শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

*সুতরাং নবী-রাসূলগণ, শোহাদায়ে কেরামগণ, তাক্বওয়াশীল আলিম তথা আল্লাহর ওলীগণ, হাফেজে কোরআন বিবিধ শ্রেণীর লোকেরা তাঁদের আপনজনদের শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

 

আরো পড়ুনঃ